ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিহত সাংবাদিকদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে সরকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
নিহত সাংবাদিকদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে সরকার ছবি: শাকিল/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা মামলার ফের তদন্ত করবে সরকার। মানিক সাহা ও সাগর-রুনি হত্যাসহ সাংবাদিক হত্যার সব মামলার অবস্থা উল্লেখ করে শ্বেতপত্রও প্রকাশ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।



শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।

‘বিশিষ্ট সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক সাহার ১২তম হত্যাবার্ষিকী’তে এ সভার আয়োজন করে ‘মানিক সাহা হত্যার বিচারপ্রার্থী সাংবাদিক সমাজ’ নামে একটি সংগঠন।

মন্ত্রী বলেন, মানিক সাহা হত্যা মামলার আবার তদন্ত চাচ্ছেন আপনারা, তার অর্থ হলো, মামলাটি যথাযথভাবে সাজানো হয়নি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করবো, যাতে আবার তদন্ত হয়।

মানিক সাহা, সাগর-রুনিসহ যারা নিহত হয়েছেন, তাদের মামলাগুলোর এখন কী অবস্থা, সেসব উল্লেখ করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করার বিষয়ে উদ্যোগ নেব- বলেন হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, নির্বিঘ্ন সাংবাদিকতার স্বার্থে জঙ্গিবাদমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে চায় সরকার। কোনো অন্যায়ের বিচার না হওয়া অন্যায়কে উৎসাহিত করে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল হয়েছে, কিন্তু উত্তারাধিকার সূত্রে সাম্প্রদায়িকতার জঞ্জালে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক রাহুল রাহার সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক সাংবাদিক শাহ আলমগীর, ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ ও দৈনিক কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্র প্রমুখ।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই আমরা। রাষ্ট্রকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলেই মৌলবাদী, জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের এ দেশ থেকে দূর করতে পারবো। মানিককে হত্যা করা হয়েছিল, সবাইকে সাবধান করতে। এটা বোঝাতে, বাড়াবাড়ি করলে তোমাদেরও এ অবস্থা কর‍া হবে।

বামপন্থিদের উপরই এ ধরনের আক্রমণ প্রথম ও বেশি হয়েছিল বলে বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন সিপিবির সভাপতি।

তিনি বলেন, ভুলে যাওয়ার খেসারত সবাইকে দিতে হয়। ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়।

সাংবাদিকতার আদর্শিক কারণেই মানিক সাহাকে হত্যা করা হয়েছিল অভিযোগ করেন কলামিস্ট আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, দেখা গেছে, গত ১০/১৫ বছরে যেসব সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই সীমান্ত এলাকার। মানিক যদি জমিজমা, টাকা-পয়সা নিয়ে নিহত হতেন, তাহলে কিছুই বলার ছিল না। কিন্তু তিনি নিহত হয়েছেন আদর্শের কারণে। মানিক লড়াই করেছেন- চিংড়ির ঘের নিয়ে, মৌলবাদিতা প্রসঙ্গে, সুন্দরবন রক্ষায়। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তার পাশে ছিল না। বিচার-বিবেচনা করে দেখেছি, মানিকের অন্যতম হত্যাকারী রাষ্ট্রব্যবস্থা।

পেশাগত কারণে গত ২০/২৫ বছরে নিহত সাংবাদিকদের তালিকা করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে তথ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। ৪/৫ জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে এ কাজ করার পরামর্শও দেন তিনি।

মকসুদ বলেন, রাষ্ট্রকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। কেউ কেউ হত্যাকাণ্ড ঘটায়নি, কিন্তু হত্যাকারীকে বাঁচাতে তৎপর ছিল। ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধেও।

প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক সাংবাদিক শাহ আলমগীর বলেন, সাংবাদিকতার পরিবেশ বজায় রাখতেই এ বিচারগুলো হতে হবে। মানিক সাহার মতো সাংবাদিকদের প্রয়োজন যুগে যুগে। অথচ হত্যার ১২ বছরেও বিচার না হওয়া জনমনে খারাপ প্রভাব ফেলে, সাংবাদিকদের মনে হতাশা তৈরি করবে। রাষ্ট্রই পারে ব্যবস্থা নিতে।

মানিক সাহার সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের আউটপুট এডিটর সাংবাদিক রাহুল রাহা বলেন, আজ সুন্দরবনে যে পর্যটন ব্যবস্থা চালু রয়েছে তা মানিক সাহার অবদান। মানিক সাহা বলতেন, নিপীড়িত মানুষ কোথাও যখন সুবিচার পায় না, তখন তারা গণমাধ্যমের কাছে যায়। শেষ পর্যন্তও মানুষ রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত থাকে কেবল গণমাধ্যমের কারণে। গণমাধ্যমের গুরুত্ব তাই অনেক। এসব বলেই তিনি আমাকে সাংবাদিকতায় আনেন।

রাহুল রাহা আরও বলেন, খুনি এরশাদ শিকদার আওয়ামী লীগে যোগ দিলে মানিক সাহা সেই সত্য প্রকাশ করেন বলিষ্ঠ সাহসিকতায়। যার ভিত্তিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদ শিকদারকে দল থেকে বহিষ্কার করেন।

‘মানিক সাহা বলতেন, সাংবাদিকতা হলো, সততাসম্পন্ন অ্যাকশন’- বলেন রাহুল রাহা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬/আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা
এসকেএস/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।