বগুড়া: উত্তরণ পিঠা ঘরে দাঁড়িয়ে এক ছোট্ট শিশু পিঠা খেতে ব্যস্ত। নাম তার সায়েরা আজম আস্তা।
পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যের অংশ। নবান্ন, শীত ও বসন্ত সব মৌসুমে কম-বেশি বাঙালিদের পিঠা খেতে দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমে তা উৎসবের আকার ধারণ করে। এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পিঠার ধরন আলাদা। স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা।
শীতের আগমনী হাওয়া লেগেছে বৃক্ষের প্রতি শাখায়। আকাশ ভরলো আলোয়, আর বাতাস ভরলো গানে। বর্ণিল আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে তার নির্মল দ্যূতি। শীত মাখানো বসন্তে রঙে রাঙানো প্রকৃতির এমন রূপে শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) বগুড়ার শহীদ টিটু পৌর মিলনায়তনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে পিঠা উৎসব। উৎসবকে ঘিরে মিলনায়তন প্রাঙ্গণ ছিলো লোকে লোকারণ্য।
এদিন সকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের প্রশাসক ডা. মকবুল হোসেন। বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, নবনির্বাচিত কাউন্সিলর কবিরাজ তরুণ চক্রবর্তী প্রমুখ।
দিন শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনওয়ার হোসেন, জেলার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান মিঠু। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্থানীয় লিটল থিয়েটারের পরিচালক তৌফিক হাসান ময়না ও ‘ভোর হলো’র সমন্বয়কারী তাসলিমা বেগম।
বক্তারা বলেন, বাহারি রংয়ের পিঠা আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ। দেশে সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় উৎসবে পিঠার প্রচলন অতি প্রাচীন। এ ধরনের আয়োজন সবাইকে গ্রাম-বাঙলার সংস্কৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
কথা হয় উৎসবের পিঠা দোকানি মিম, লাকি, আশা ও জিমির সঙ্গে। তারা সবাই লেখাপড়া করেন। বাংলানিউজকে তারা জানান, লবঙ্গ লতিকা, পাটিসাপটা, ফ্রায়েড মেমো, গোলাপ, হৃদয় হরণ, শঙ্খ, স্পঞ্জ, গোকুল, ম্যারা, মিষ্টিপুলি, পায়েস রোল, সেমাই, রস, নকশি, দুধ কুশলি, কমলা, পেয়াজু, গাজরের মিষ্টিপান, সুজি, ডিমের ঝাল পাটিসাপটা, নুডলস পাকৌড়া, চিতই, মন মহিনী, খাস্তা, তেল, তালের, খির চমচম, খেজুর, দুধপুলি, পুতুল, জামাই, বিস্কুট, রসে ভেজা সূর্যমুখী পিঠা ছাড়াও আরো বিভিন্ন নামের পিঠা এই উৎসবে স্থান পেয়েছে।
তারা জানান, দামও রাখা হয়েছে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। মাত্র সাত টাকা থেকে ২৫ টাকার মধ্যে যে কেউ পিঠা কিনে এর স্বাদ নিতে পারেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেবিলে রকমারি থালায় থরে থরে সাজিয়া রাখা হয়েছে হরেক রকম পিঠা। যা দেখলে চোখ ছানাবড়া হয়ে ওঠে, জিহ্বায় আসে পানি। অগত্যা দর্শনার্থীরা পিঠা খেতে ভিড় জমায়। এক্ষেত্রে শিশুরা এগিয়ে থাকলেও সব বয়সী মানুষকেই কম-বেশি পিঠা খেতে দেখা যায়।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্বস্তি, প্রিয়তী ও রিমঝিম বাংলানিউজকে জানায়, গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি লালন করতে তারা এই উৎসবে যোগ দিয়েছে। এখানে তারা পিঠার দোকান দিয়েছে। এতে পিঠা সম্পর্কে তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানা হচ্ছে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করতে শিখছে।
মেলায় আসা শশী, শামীম, অপর্ণা বাংলানিউজকে জানান, তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এই পিঠা উৎসব দেখতে এখানে এসেছে। এর আগে তারা কখনও এতো ডিজাইনের পিঠা দেখেননি। উৎসবে এসে পিঠা দেখা হলো। বাহারি রকমের পিঠাও খাওয়া হয়েছে।
উৎসবে সুরের ছোঁয়া সংগীত নিকেতন, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ থিয়েটার, ভান্ডারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, এপিবিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরণ পিঠা ঘরসহ ১০টির মতো স্টল অংশ নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এমবিএইচ/টিআই