ঢাকা: লাইন ধরে ছুটছে রিকশা। মূল রাস্তায় এসে যানজট নয়, অন্য বাহনের সঙ্গে বাঁধিয়ে দেওয়া নয়, লাইনে লাইনে শৃঙ্খলিত হয়ে রিকশা চলাচলের এই দৃশ্য দেখা গেলো রাজধানীর নতুনবাজার মোড়ে।
বরাবর যেখানে যানজট আর রিকশার বেড়াজালে যানবাহনের হ-য-ব-র-ল অবস্থা। সেখানে এখন অনেকটাই ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) কয়েকশ’ রিকশা যখন লাইন ধরে ছুটছে, তখন সড়কটিতে অন্যান্য যানবাহন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে দেখা যায়। এদিন গাড়ির চাপ অন্য দিনের চেয়ে বেশি থাকার পরও যানজটমুক্ত দেখা গেছে নতুনবাজার মোড়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ নতুনবাজার মোড়টি পাইলট প্রকল্প হিসেবে ধরে নিয়ে অস্থায়ী রিকশা লেন বানিয়ে কাজ শুরুর পরই এমন ফল পাওয়া যায়। এভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা গেলে রামপুরা থেকে কুড়িল পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে পৃথক স্থায়ী রিকশা লেন করা হবে বলে জানায় ট্রাফিক বিভাগ।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. শাহেন শাহ বলেন, উল্টো দিক থেকে রিকশা আসা বন্ধ এবং সড়কে যান্ত্রিক গাড়ির গতি থামিয়ে দেওয়া বন্ধ করতেই রিকশার জন্য আলাদা লেন ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুনবাজার মোড়টি পাইলট প্রকল্প হিসেবে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
খুব শিগরিই রামপুরা ব্রিজ থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত এভাবে দু’পাশে আলাদা রিকশা লেন করে দেওয়া হবে। তবে তার আগে এটি সফল কিনা সেটি দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
নতুনবাজারে রিকশা লেন ধরে রিকশা চলাচলের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য খলিল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রিকশা লেনের বাইরে সড়কে কোনো রিকশাকে তারা যেতে দিচ্ছেন না। এজন্য সড়কে অন্যান্য পরিবহনগুলো খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে, কোনো যানজট হচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িল থেকে বাড্ডার দিকে যাওয়ার পথে নতুনবাজার মোড় থেকে বাঁশতলা পর্যন্ত প্রায় অর্ধকিলোমিটার সড়ককে আলাদা রিকশা লেন বসিয়ে দেওয়ায় বেশ শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। যেখানে আগে যানজটের কারণে নতুনবাজার থেকে বাঁশতলা যেতে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগতো, সেখানে এখন মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যেই যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
মাদানী অ্যাভিনিউ এলাকার বাসিন্দা আখলাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ তৎপর হলে যে একটু হলেও যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা যায়, এটা তার একটা নজির।
‘শুধু রাস্তার একপাশ নয়, বাড্ডা থেকে কুড়িল চৌরাস্তার দিকে যেতে নতুনবাজার মোড়ে বিহঙ্গ, ট্রাস্ট, জাবালে নূর, জাবালে তূর, গ্রামীণ পরিবহন গাড়িগুলো এবড়ো-খেবড়োভাবে পার্কিং করে যানজট লাগায়। ডিপ্লোম্যাটিক জোন হওয়ার পরও পুলিশ এসব স্থানে দাঁড়ানো পরিবহন সরিয়ে দেয় না। ফলে কুড়িল বিশ্বরোডের দিকে যাওয়ার পথে নতুনবাজার মোড় পার হতে বেশ কিছুক্ষণ লেগে যায়’- বললেন আখলাক।
পুলিশের বিরুদ্ধে এ নিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, পাশেই ট্রাফিক পুলিশ বক্স আর এরপাশেই গুলশান জোনের চেকপোস্ট, তারপরও এই মোড় ঘিরে যত যানজট।
নতুনবাজারে মোড়ে দীর্ঘক্ষণ ঘোরাফেরা করে দেখা যায়, রীতিমতো একটি মিনি বাস টার্মিনাল বানিয়ে ফেলেছেন চালক-শ্রমিকরা। আকিক, জাবালে নূর, জাবালে তূর, বিহঙ্গ, ট্রাস্ট পরিবহন এবং গ্রামীণ পরিবহনের গাড়িগুলো রাস্তার মধ্যেই যাত্রী উঠানামা করছে। যদিও এখানে কোনো বৈধ বাসস্ট্যান্ড নেই।
নতুনবাজার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মাহবুব ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, এখানে সমস্যা হলো গাড়ির আধিক্য। যে কারণে অনেক সময় এক গাড়ির পেছনে আরেক গাড়ি, আবার অনেক গাড়ি ভিড় জমায় একসঙ্গে।
তিনি বলেন, স্থায়ীভাবে রিকশা লেন হয়ে গেলে কোনো গাড়ি আর নতুনবাজার মোড়ের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না। গাড়িগুলোকে নির্ধারিত রুট ধরেই চলতে হবে।
** বিস্তৃত হচ্ছে রামপুরা ব্রিজ থেকে কুড়িল পর্যন্ত
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এসএ/টিআই