ঢাকা: চই মরিচ, পাঁচমুখ নিয়ে পঞ্চমুখি কচু, সুগন্ধীযুক্ত সুগন্ধী কচু, অথবা টক বেগুন, তিঁত বেগুন, সীতা লাউ, বিনি কচু, সাতকড়াসহ অসংখ্য পরিচিত-অপরিচিত সবজির দেখা মিলছে জাতীয় সবজি মেলা ও প্রদর্শনীতে।
এছাড়া এমন অনেক সবজিই আছে নাম একটি, কিন্তু জাত ১৫ থেকে ২০ ধরনের।
রাজধানীর খামারবাড়ির আ কা মু গিয়াস উদ্দিন মিলকী মিলনায়তন চত্বরে প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী এই সবজি মেলা ও প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীরা সবজি বিষয়ের সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। এছাড়া কেউ যদি সবজি কিনতে চান, সে সুযোগও আছে এখানে।
প্রদর্শনী প্রাঙ্গণের মূল ফটক পার হলেই দেখা যাবে সবুজ গাছে লক লক করছে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি। কয়েক ধাপ এগোলে চোখে পড়বে বিশাল আকৃতির নানা সবজি দিয়ে তৈরি পিরামিডের।
সবজির এই পিরামিড ঘিরে দর্শনার্থীদের উৎসাহ ও কৌতুহলের যেন শেষ নেই। আলু, সিম, ফুলকপি, টমেটো, মুলা, বেগুন, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি দিয়ে সাজানো হয়েছে এ পিরামিড।
বাম পাশে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্যাভিলিয়ন। এতে দেখানো হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাষ করা সবজির চিত্র। একেবারে শেষ কর্নারে রয়েছে বসত বাড়ি ও আঙ্গিনায় সবজি ও মাছ চাষের একটি চিত্রায়ন।
এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, হর্টেক্স ফাউন্ডেশনসহ সরকারি কৃষি সংশ্লিষ্ট গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত ও গবেষণালব্ধ বিভিন্ন জাতের সবজি ও সবজি বীজের প্রদর্শন করা হয়েছে।
দেশের সবজি বাজারে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণও যে অনেক বড় অবস্থানে আছে, তার প্রমাণও মিলছে এ মেলা ও প্রদর্শনীতে। নামকরা সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিজেদের পণ্যের পরিচিতি ও গুণগত মান তুলে ধরা হচ্ছে দর্শনার্থীদের কাছে।
শুধু সবজি প্রদর্শনী নয়, এখান থেকে সবজি চাষীরাও পাচ্ছেন নানা তথ্য। নিজেদের সমস্যা নিয়ে আলোচনাও করছেন মেলায় উপস্থিত থাকা কৃষিবিদ, গবেষক, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে। গাছে ধরা এসব সবজির দেখা পেয়ে দর্শনার্থীরাও অনেক খুশি।
সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশে যে ব্যাপক প্রসারতার পাশাপাশি বৈচিত্র্য ঘটেছে তারও দৃশ্যায়ন হয়েছে এ মেলায়। মাটি ছাড়া সবজি উৎপাদন, মাশরুমের নানা ব্যবহার, স্টলের মাধ্যমে সবজি বিক্রি- সব কিছুরই দেখা মিলছে এতে।
পুষ্টিসমৃদ্ধ জৈব পদ্ধতিতে সবজির চাষে যে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে, তার প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়েছেন উদ্যোক্তারা। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফলতা পাওয়া যায় সে তথ্য ও পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।
যেখানে সবজি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সেখানে রফতানিতেই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? আর তাই সবজি রফতানিতে কী কী করতে হবে তার তথ্যও মিলছে এ মেলায়। হর্টেক্স ফাউন্ডেশন এমন সব নানা আয়োজন নিয়ে দর্শনার্থীদের তথ্য সরবরাহ করছে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব চেনা ও অচেনা সবজির সঙ্গে পরিচিত হতে পারছেন দর্শনার্থীরা।
সবজি মেলা ও প্রদর্শনী উপলক্ষে হাতে নেওয়া হয় নানা আয়োজন। রোববার (১৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে এর আনুষ্ঠিকতা।
শোভাযাত্রা শেষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে ‘পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে বছরব্যাপী সবজি চাষ’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বক্তারা পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি চাষ ও সবজির অর্জনকে ধরে রাখার আহ্বান জানান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া।
বড় পরিসরে আয়োজিত ‘জাতীয় সবজি মেলা ২০১৬ ও সবজি প্রদর্শনী’র উদ্বোধন করেন অতিথিরা। উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ, অতিরিক্ত সচিব আনেয়ার ফারুক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কালাম আযাদসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রধান, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষক, বেসরকারি কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীসহ অনেকেই।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আয়োজিত এ মেলা ও প্রদর্শনী আগামী বুধবার (২০ জানুয়ারি) শেষ হবে। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে আয়োজকরা জানান, সবজি উৎপাদন ও খাওয়ার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি।
তারা জানান, ‘হরেক রকম সবজি চাষে, সারা বছর অভাব নাশে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া জাতীয় সবজি মেলা ও সবজি প্রদর্শনীতে ১৫৭ রকমের সবজি প্রদর্শিত হচ্ছে। এতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ৫০টি স্টল অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
একে/এএসআর
** রাজধানীতে বসছে সবজির মেলা
** সবজি উৎপাদনের অর্জনকে ধরে রাখার আহ্বান