ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাতিয়া থেকে আসাদ জামান

ঘাসিয়ার চরে মানুষের বসত

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
ঘাসিয়ার চরে মানুষের বসত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঘাসিয়ার চর (হাতিয়া) থেকে: গৃহহীন, ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতাধীন ৩টি উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে হাতিয়ার (নোয়াখালী) ঘাসিয়ার চরকে ‘মানুষের চর’ বানানোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
 
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদী ও সাগর বেষ্টিত উপ-দ্বীপ ঘাসিয়ার চর মানুষের চরে রূপান্তরিত হবে খুব শিগগিরই।


 
হাতিয়া সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ৫০ বছর আগে জেগে ওঠা ঘাসিয়ার চরের হাজার হাজার একর জমি এতদিন ছিল বিরান ভূমি। ধান চাষ ও গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া চরানো ছাড়া আর কোনো কাজে ব্যবহার হত না ঘাসিয়ার চর।
 
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতাধীন চরঘাসিয়া মডেল হাসনাত গ্র্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প, চরঘাসিয়া সূর্যমুখী আশ্রয়ণ প্রকল্প ও নলের চর ধানসিঁড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প সেই বিরান ভূমিকে মানুষের আবাস ভূমিতে পরিণত করার কাজ গড়ে ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
 
রোববার (১৭ জানুয়ারি) সারাদিন ঘাসিয়ার চর ঘুরে দেখা যায়, চরঘাসিয়া মডেল হাসনাত গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ড্রুজার মেশিন দিয়ে মাটি কম্পেকশন।
 
৫০ একর জমির উপর বাস্তবায়নাধীন এ উপ-প্রকল্পে ১৫শ’ পরিবারের আবাসন ব্যবস্থা করা হবে। যেখানে বাস করবে অন্তত সাড়ে চার হাজার গৃহহীন, ভূমিহীন অথবা ছিন্নমূল মানুষ।
 
স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯শ’ মেট্রিকটন গম।
 
ঘাসিয়ার চরের দ্বিতীয় উপ-প্রকল্প ‘চর ঘাসিয়া’ সূর্যমুখী আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজও ৩০ ভাগ শেষ হয়েছে। ৬০ একর জমির উপর বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পেও ১৫শ’ পরিবারের আবাসন ব্যবস্থা করা হবে। যেখানে আরো সাড়ে ৪ হাজার গৃহহীন, ভূমিহীন অথবা ছিন্নমূল মানুষ বসবাস করতে পারবে।
 
রোববার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, তিন স্কেবেটর (মাটি কাটার য্ন্ত্র) দুইটি ডামবার (মাটি বহনকারী ছোট ট্রাক) ও দুইটি ড্রুজার দিয়ে ১৫/২০ জন শ্রমিক বিরামহীনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
 
প্রকল্প বাস্তবয়নের সাথে সম্পৃক্ত কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব প্রকল্পে থাকছে পাকা ঘর, পাকা রাস্তা, পাকা মসজিদ, পাকা ঘাটওয়ালা বড় পুকুর (দিঘী) কমিউনিটি ক্লিনিক, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্কুল, মাদ্রাসাসহ আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর মার্চ মাসে শুরু হওয়া এসব প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হবে। এর পর অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হবে প্রকল্পগুলো। তারাই ঘর-বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করবে।
 
হাতিয়া উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে চার যুগ আগে জেগে ওঠা উপ-দ্বীপ সদৃশ ঘাসিয়ার চরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ বাস্তবায়নের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বনবিভাগের সামাজিক বন‍ায়নে সৃষ্টি হওয়া ঘাসিয়ার চরের বিশাল বনভূমি এক সময় ছিল ডাকাতদের অভয়ারণ্য।
 
এখানে ঘাপটি মেরে থাকা ডাকাতরা মেঘনা নদীর মোহনা ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে আসা জেলেদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে সর্বস্ব লুট করত। হাতিয়ার বিভিন্ন চর থেকে গরু ও মহিষ চরাতে আসা কৃষকদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি জোগাড় করত। কথা না শুনলে কৃষকদের ওপর চালাত অমানসিক নির্যাতন।
 
জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস ঘাসিয়ার চরকে ডাকাতমুক্ত করতে ২৮০ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন চালিত দৈত্য আকৃতির একটি ট্রলারের ব্যবস্থা করে দেন। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই ট্রলারের সাহায্যে নলচিরা পুলিশ ফাঁড়ি ও র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ঘাসিয়ার চরের দুর্গম বনভূমিতে ব্যাপক অভিযান চালায়। ওই অভিযানের পর ঘাসিয়ার চর ডাকাতমুক্ত হওয়ায় বিস্তৃর্ণ চর এলাকা মানুষের বসবাস উপযোগী হয়ে উঠেছে।
 
এ ছাড়া হাতিয়া উপজেলার কেয়ারিংচর মৌজার কয়েক শ’ একর জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টের জন্য হস্তান্তর করায় ওই এলাকায় আগে থেকে ঘর-বাড়ি তুলে বসবাস করা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার গৃহহীন মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
 
তাদের জন্যই ঘাসিয়ার চর ও নলের চরে ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। স্থানীয় সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে কেয়ারিংচর থেকে সরিয়ে নেওয়া সাড়ে ৬ হাজার গৃহহীন মানুষসহ প্রায় ১৫ হাজার মানুষের আবাসন ব্যবস্থা হবে।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস ও হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি নথিপত্রে হাতিয়া উপজেলাকে ২২শ’ বর্গ কিলোমিটার দেখানো হলেও ছোট-বড় ১ শ’ টি উপ-দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত হাতিয়ার প্রকৃত আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
 
পুরো হাতিয়া উপজেলাকে মানুষের বসবাসযোগ্য আদর্শ একটি উপজেলায় রূপান্তরিত করতে বর্তমান সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, ঘাসিয়ার চরের আশ্রয়ণ প্রকল্প সেই উদ্যোগেরই অংশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।