ঢাকা: কর্মবিরতি ও আন্দোলন স্থগিত করে নয়দিনের মাথায় ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
আন্দোলনের নবম দিনে দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা বৈঠকের পর জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর বুধবার (২০ জানুয়ারি) থেকে ক্লাসে ফিরে যাবেন দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বৈঠক শেষে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন নেতারা তাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে পর্যালোচনা করে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যালোচনা সভা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বিকেল সোয়া ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে শুরু হয় বৈঠক। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা অংশ নেন। ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে চলে এই বৈঠক।
আন্দোলন স্থগিত, প্রত্যাহার নয়
বৈঠক শেষে ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এসএমএস মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতি আমরা আস্থাশীল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি-দাওয়া নিজে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করে চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি।
তবে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়নি জানিয়ে শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব বলেন, স্থগিত ঘোষণা করাটাও আন্দোলনেরই একটি অংশ।
আমলাদের কূট-কৌশল মানা হবে না
‘পাশাপাশি কোনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বা কোনো কোনো আমলার কূট-কৌশলের কারণে দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো বিলম্ব হয় অথবা খণ্ডিতভাবে দাবি-দাওয়াগুলোকে মেনে নেওয়ার জন্য করা হয়, তাহলে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে পদক্ষেপ নেবো,’ বলেন মাকসুদ কামাল।
মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝাতে পেরেছি, দাবিগুলো ন্যায্য। সুতরাং খণ্ডিতভাবে দাবিগুলো মানা হয় অথবা যদি বিলম্ব করা হয়, তাহলে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কোনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবেন তাদের গ্রহণ করবে না। যারা এগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকবেন তাদের বিষয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
‘শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনকে সম্পৃক্ত করেই দাবিগুলোর নিষ্পত্তি করতে হবে। যদি না করা হয় তাহলে মনে করবো, দাবি-দাওয়া বা আমাদের সেখানেও অবহেলার চোখে দেখা হয়েছে’।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আশা করি এই সময়ের মধ্যে দাবিগুলো পূরণ হবে। যদি তা না হয় তাহলে ওই সভা থেকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।
ক্লাসে ফিরবেন সব শিক্ষক
প্রায় ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। মাকসুদ কামাল বলেন, সমিতির নেতারা ফিরে গিয়ে সাধারণ সভা করে স্থগিতের বিষয়টি অবহিত করবেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর্মসূচি স্থগিত, বুধবার থেকে আমরা ক্লাসে ফিরে যাচ্ছি। আশা করছি, এই সময়ের (৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে দাবি পূরণ হবে। আর যদি কোনো কূট-কৌশল হয়, সেগুলো পর্যালোচনার জন্য বসবো। তখন পরবর্তী করণীয় কী হবে তা সিদ্ধান্ত নেবো।
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী দাবির বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কথা বলেছেন। আমরা সচিবদের যুক্তি খণ্ডন করেছি। প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাপারগুলো দেখার জন্য আশ্বস্ত করেছেন। আমাদের অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি।
সময় দীর্ঘ দেওয়ায় ক্ষোভ
দুটি বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির দু’জন নেতা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সরকারকে প্রায় ২০ দিন সময় দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতারা। তবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য বৈঠককে সামনে রেখে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন শিক্ষকরা।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে গণভবনে পিঠা উৎসবের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেড় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আটজন শিক্ষক নেতা ছাড়াও সরকারের তিন সচিব অংশ নেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম জানান, শিক্ষকদের ৩ নম্বর গ্রেড থেকে ১ নম্বর গ্রেডে উন্নীতের জন্য পদোন্নতির সোপান তৈরির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ১ নম্বর গ্রেডে যেতে অন্যান্য দাবি-দাওয়া বিবেচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অষ্টম বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেলে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি অধ্যাপক পদের ‘অবনমন’ ঘটেছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
মর্যাদা ও বেতন প্রশ্নে বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলনের পর গত ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছেন দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সপ্তম বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৩ এ উন্নীত হওয়াসহ যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসতেন তা বহাল রাখার জন্য প্রস্তাব করেন শিক্ষকরা। এছাড়া গ্রেড-১ থেকে কিছু সংখ্যক শিক্ষককে সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা প্রদানের জন্যও প্রস্তাব করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
এমআইএইচ/আইএ/এএসআর
** বুধবার ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষকরা
** শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত
** ক্লাসে ফেরার বিষয়ে বৈঠকে বসেছেন শিক্ষকরা
** শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরতে বললেন প্রধানমন্ত্রী