ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘অসচেতনতার কারণেই ছিঁড়ে পড়ে লিফট’

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
‘অসচেতনতার কারণেই ছিঁড়ে পড়ে লিফট’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিচ তলা থেকে দু’তলায় ট্রলিসহ উঠছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত জসিম উদ্দিন। সঙ্গে স্ত্রী, সন্তানসহ ৫ জন।

ট্রলি পুরোপুরি ভেতরে ঢুকতে না পারায় ও হঠাৎ করেই লিফট চালু হয়ে যাওয়ায় সেখানে আটকা পড়েন তারা। ছিটকে পড়েন স্ত্রী পারভীন আক্তার।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ টানা দু’ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর বেরিয়ে এলেন তারা। জীবিত অবস্থায় সবাইকে উদ্ধার করতে পেরে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

তবে, ওই রোগী ও তার স্বজনদের অসচেতনতা ও পুরনো লিফটে অতিরিক্ত লোক ওঠার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন। সন্ধ্যায় বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি করেন।

যেভাবে উদ্ধার:
হঠাৎ লিফট চালু হয়ে যাওয়ায় ট্রলির উপরে থাকা রোগী জসিম উদ্দিনের একটি পা আর ট্রলির পেছনের অংশ লিফটের দরজা ও চ্যানেলের পাশের দেওয়ালে আটকে যায়। গ্র্যান্ডিং মেশিন ব্যবহার করে লিফটের দরজার শিট কেটে ফাঁকা করে তিনজনকে প্রথমে বের করে আনা হয়। তখনও ভেতরে আটকে থাকেন রোগী জসিম উদ্দিন ও তার মেয়ে জামাই শাকিল (২৮)। পরে শাকিলকেও উদ্ধার করা হয়।

এরপর লিফটের নাটবল্টু খুলে হাইড্রোলিক স্পেডার মেশিন ব্যবহার করে রোগীকে বের করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, জানান ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শহীদুর রহমান।

দায়ী রোগীদের অসচেতনতা:
এ ঘটনার জন্য রোগীদের অসচেনতাকেই দায়ী করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, সবাইকে আমি বারবার সতর্ক করে নিজে মাইকিং করেছি, পুরনো এসব লিফটে রোগীর সঙ্গে একজন অ্যাটেনডেন্ট ছাড়া অন্য কেউ উঠবেন না।

কিন্তু কে শোনে কার কথা। রোগী জসিম উদ্দিনের সঙ্গে ৫ জন ওঠার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলেও মত তার।

‘আমরা ভাল আছি, আব্বুকে বাঁচান’ :
রোগী জসিম উদ্দিনের সঙ্গে লিফটে আটকা পড়েছিলেন তার মেয়ে সুমি ও ছেলে শিহাবসহ একই পরিবারের ৫ জন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রথমে তাদের দু’জনকে বের করে আনে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ দু’জনের খোঁজ নিতে যারাই আসছিলেন তাদের দু’ভাই-বোন সুমি ও শিহাব বলছিলেন, ‘আমরা ভালো আছি। আব্বুকে বাঁচান। ’ এ সময় তাদের চোখের কোণ থেকে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। দু’সন্তান বাবার জন্য ছটফট করছিলেন।

গলাধরা কণ্ঠে জান্নাতুল ফেরদৌস সুমি বলতে থাকেন পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত। ‘আব্বুর ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করতে আমরা জরুরি বিভাগের নিচ তলা থেকে দু’তলায় উঠছিলাম। লিফটের ভেতরে অর্ধেক ট্রলি ঢোকার সময়েই হঠাৎ লিফট উপরে উঠে পড়ে। আম্মু ছিটকে পড়ে যায়।

বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন ধাক্কা দিয়ে লিফট খোলার চেষ্টা করে। ট্রলির অর্ধেক অংশের কারণে লিফটের দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বারবার আব্বু বলছিল লিফট খুলতে বল, আমাদের বের কর, যোগ করেন সুমি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।