ঢাকা: বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় পাশে থাকবে যুক্তরাজ্য। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ উন্নয়নের সবক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে এ দেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় ব্রিটিশ সরকার।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত ব্রিটিশ ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকায় নিযুক্ত নতুন এই ব্রিটিশ হাইকমিশনার। ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) বাংলাদেশ প্রধান সারা কুকও উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনার ব্লেক বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এবং আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে যুক্তরাজ্য অবদান রাখতে পারে। আইনের শাসনের মাধ্যমে সুশীল সমাজের বিকাশ ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল সমাজ বিনির্মাণের সবচেয়ে উত্তমপন্থা।
অ্যালিসন ব্লেক বলেন, বাংলাদেশের বন্ধু ও বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক দাতা হিসেবে যুক্তরাজ্য এ দেশের ভবিষ্যৎ ও দুই দেশের সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ দেশের মানুষ ব্রিটিশ সমাজে অপরিমেয় অবদান রেখেছেন।
বাংলাদেশে আগামীতে সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে হাইকমিশনার ব্লেক বলেন, এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের সহায়তা থাকবে। আর সংসদীয় গণতন্ত্রে সবার অংশগ্রহণ থাকা উচিত। কেননা, এটি একটি দেশের জন্য স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আনে। এছাড়া বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাজ্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেক বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে দুই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে যে উদ্বেগ ছিল, তা গোপন করার কিছু নেই। কারণ ওই নির্বাচনে অধিকাংশ জনগণ ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
তবে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তারা মন্তব্য করে থাকেন উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন অতীতের তুলনায় শান্তিপূর্ণ ছিল। এসব নির্বাচনে হস্তক্ষেপও কম ছিল। তাছাড়া বিরোধী দলও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যালিসন ব্লেক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিতে যুক্তরাজ্য উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, এদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কর্মদক্ষতা বাড়াতে ডিএফআইডির অর্থায়নে নানাভাবে সাহয্য করে আসছে ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বা কাজের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন থাকে যুক্তরাজ্য তাদের সহযোগিতা করে না। সংবাদ মাধ্যমে আসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সম্পর্কে আমরা অবগত। আমি মনে করি এ ধরনের প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া উচিত।
এছাড়া আরেক প্রশ্নের জবাবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করতে জোর তাগিদ দেন যুক্তরাজ্যের এই দূত।
তিনি বলেন, দুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করা হবে আমার প্রথম অগ্রাধিকার। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো, উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া, শিক্ষা খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং দুই দেশের জনগণের মেলবন্ধনের বিষয় গুরুত্ব পাবে।
ঢাকায় আসার এক সপ্তাহের মাথায় মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন ব্লেইক। এর পরদিনই ঢাকায় প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন এই নারী কূটনীতিক।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬/আপডেট ১৬৪৬
জেপি/আরএইচএস/আরএইচ/আইএ