বরগুনা: পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, অভিযুক্ত স্থানীয় মাদ্রসা শিক্ষক আমিরুল ইসলাম ৬শ’ টাকা নির্ধারিত সংযোগ ফি’র পরিবর্তে গ্রাহকদের কাছ থেকে ২ হাজার ৯শ’ টাকা করে আদায় করেছেন।
এছাড়াও নতুন সংযোগের জন্য গ্রাহকদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা করে দাবি করেন ওই শিক্ষক।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনার আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নম্বর এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের রক্ষাচন্ডী গ্রাম থেকে মনসাতলী গ্রাম পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন স্থাপন করে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
নতুন এ বিদ্যুৎ লাইনের আওতায় ১২১টি পরিবারকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেবে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বরগুনা জোনাল অফিস। এখানে সদস্য ভর্তি ফি ৫০ টাকা ও সংযোগের জন্য জামানত দিতে হবে ৬শ’ টাকা।
কিন্তু কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আমিরুল ইসলাম নতুন সংযোগ লাইন স্থাপন, পরিবহন, মিটার ও অফিসে টাকা দেওয়ার অজুহাতে দফায় দফায় গ্রাহকদের কাছ থেকে ২ হাজার ৯শ’ টাকা আদায় করেছেন।
প্রথমে নতুন সংযোগ, পরিবহন ও অফিসে দেওয়ার নাম করে এক হাজার ৪শ’ টাকা আদায় করেন ওই শিক্ষক। পরে নতুন সংযোগ লাইনের কাজ চলমান অবস্থায় পুনরায় আরো এক হাজার ৫শ’ টাকা মিটার বাবদ আদায় করেন।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে মাদ্রাসা শিক্ষকের অনুসারী হত্যা মামলার আসামি ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মাহবুব ও আরেক অনুসারী নুরুল ইসলামের রোষানলে পড়তে হয় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের প্রতিবেদককে।
পরে স্থানীয় সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল আলীম হিমু ও মুশফিক আরিফ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ সময় মাদক ব্যবসায়ী মাহবুব সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল আলীম হিমুর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তিনি (মাহবুব) সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসে বিষয়টি সামাল দেন।
সরেজমিন মনসাতলী গ্রামে গিয়ে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া যায়।
শুধু সংযোগ ফি আর মিটার বাবদ ২ হাজার ৯শ’ টাকা আদায় করেই ক্ষান্ত হননি আমিরুল ইসলাম। যারা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কম টাকা দিয়েছেন তাদের নামের পরিবর্তে যারা বেশি টাকা দিয়েছেন তাদের নাম গ্রাহক তালিকায় রেখে অন্যদের বাদ দিয়েছেন তিনি।
এখন কেউ নতুন সংযোগ চাইলে তিনি তাদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করছেন।
মনসাতলী গ্রামের বাসিন্দা ওষুধ বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, মিটার বাবদ কোনো টাকা পয়সা লাগে না তা আগে আমাদের জানা ছিলো না। এ সুযোগে স্থানীয় ধূর্ত মাদ্রাসা মাস্টার আমিরুল মুখোশের আড়ালে আমাদের ঠকিয়ে যাতায়াত খরচ ও নতুন সংযোগ লাইন স্থাপন বাবদ এক হাজার ৪শ’ টাকা ও পরে মিটার বাবদ এক হাজার ৫শ’ টাকা মোট ২ হাজার ৯শ’ টাকা আদায় করেন। কে জানে আর কয়দিন পর ঘরে আলো জ্বালাতে হলেও তাকে কোনো টাকা দেওয়া লাগে কি না।
মনসাতলী গ্রামের আরেক বাসিন্দা আলম খান (৬০) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শুরুতে আমার কাছ থেকে আমিরুল মাস্টার ৫শ’ টাকা নেন। পরে আমাকে সংযোগ না দেওয়ায় আমি বিষয়টি আমিরুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি (আমিরুল) আমার কাছে পুনরায় পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি টাকা না দেওয়ায় আমাকে সংযোগ দেওয়া হয়নি।
একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মো. আরিফ খান বাংলানিউজকে বলেন, আমি নতুন সংযোগের জন্য আমিরুল মাস্টারের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমার কাছে সংযোগ বাবদ ৩ হাজার টাকা ও মিটার বাবদ ১ হাজার ৫শ’ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অনিহা জানালে তিনি (আমিরুল) গ্রাহক তালিকা থেকে আমার নাম বাতিল করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক আমিরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলানিউজ প্রতিবেদককে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেন। এবং বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান হয়ে যাবে বলেও দাবি করেন।
তিনি আরো বলেন, বোঝেনই তো টাকা-পয়সার ব্যাপার, উপরে অনেক মহল আছে যাদের এ টাকার অংশ দিতে হয়, না দিলে কোনো কাজই হয় না। তবে উপরে কোন মহলকে টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনা অঞ্চলের পরিচালক আবু সালেহ চুন্নুর যোগসাজোশে আমিরুল মাস্টার এ টাকা আদায় করেছেন।
তাদের দাবি পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বর্তমান ডিজিএম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন তবুও পরিচালক সালেহ চুন্নুর জন্য তারা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনা অঞ্চলের পরিচালক আবু ছালেহ চুন্নু বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ রকম কোনো টাকা আদায়ের সঙ্গে জড়িত নেই।
আমিরুল নামে কোনো শিক্ষককে আমি চিনিনা। কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করে থাকেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনা অঞ্চলের ওয়ারিং পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মিটার বাবদ কোনো টাকা নেওয়ার বিধান নেই।
এভাবে মিটারের কথা বলে যারা টাকা নিয়েছেন তারা অন্যায় করেছেন। এর সঙ্গে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনা অঞ্চলের কোনো যোগাযোগ নেই।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনা অঞ্চলের উপ মহাব্যবস্থাপক সাইফুল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমিরুল ইসলাম নামে একজনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে তদন্ত টিম পাঠানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ সময় তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কোনো আপোস করবে না সে যেই হোক না কেন।
ইতোমধ্যে নিশানবাড়িয়ায় আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
আরএ