জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: সরকারের প্রচেষ্টায় নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে আসায় জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশন শুরু হয়।
নতুন বছরের শুরুর অধিবেশনে প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন। ভাষণে সরকারের বিগত সময়ের গৃহীত পদক্ষেপ ও আগামীর জন্য দিক-নির্দেশনা দেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার ভাষণে বলেন, সরকার দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিগত মেয়াদে গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে দেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী পলাতক খুনিদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম চলামান রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির প্রতি সম্পূর্ণরুপে শ্রদ্ধাশীল থেকে ’৭১ সালে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করছে এবং বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। সম্প্রতি বিচারিক আদালত কর্তৃক বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু রাজন হত্যা মামলা এবং খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ২৮টি মামলা বিচারের জন্য নেওয়া হয়। আসামী ইউসুফ আলী মৃত্যুবরণ করায় তার মামলাসহ মোট ২২টি মামলার রায় দেওয়া হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে শুনানিকালে গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করায় উক্ত মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল, আপিল বিভাগ কর্তৃক শুনানি শেষে গত ০৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত মৃতুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। অবশিষ্ট ১০ আপিল মামলা আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। ইতোমধ্যে আপিল বিভাগ কর্তৃক ৬টি আপিল মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫টি আপিল মামলায় ৪ জন কয়েদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এবং একজন কয়েদির আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। আইসিটি কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত ৬ জন আসামি বর্তমানে পালাতক রয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে একটি সুখি সমৃদ্ধ অসম্প্রদায়িক ন্যায়ভিত্তিক এবং জ্ঞাননির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
এসব লক্ষ্য অর্জনে সরকার ২০১০-২১ মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০১১-১৫ মেয়াদী ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অসমাপ্ত কার্যক্রম এসডিজি’র অন্তর্ভুক্ত নতুন বিষয়সমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬-২০ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধিকাংশ অর্জন প্রশংসিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকার শুরু থেকেই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সরকার গণতন্ত্রের বিকাশ আইনের শাসন ও আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুশাসন সুসংহত করার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস সরকার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেল করে রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬/আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা
এসএম/এসকে/এমজেএফ
** রাষ্ট্রপতির ভাষণে বছরের প্রথম অধিবেশন শুরু
** নবম অধিবেশনে পাঁচ প্যানেল সভাপতি
** শীতকালীন অধিবেশন চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত