ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন জ্যাকেটে থামলো শিশুদের কাঁপুনি

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
নতুন জ্যাকেটে থামলো শিশুদের কাঁপুনি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: কাকলী ও কাকন; দুই ভাই-বোন। কাকলী স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

কাকনের এখনও স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। তারও ইচ্ছে বড় হয়ে স্কুলে যাবার।

এদের মা রূপা দাস; বাবা কার্তিক দাস। বগুড়া শহরের চেলোপড়া রেল লাইনের পাশে গড়ে ওঠা একটি ঝুপড়ি ঘরে তাদের ঘর-কন্না।

রূপা অন্যের বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। আর কার্তিক হোটেল শ্রমিকের কাজ করেন। দু’জনের যে যৎসামান্য আয়, তা দিয়ে অভাবের সংসারের চালিয়ে নেওয়ার পরর দুই শিশু সন্তানের চাওয়া-পাওয়াগুলো আর পূরণ করা সম্ভব হয় না ‍তাদের।

এরইমধ্যে শীত জাঁকিয়ে বসতে শুরু করায় কাবু হয়ে পড়েছে দুই সন্তান। এ নিয়ে তাদের নতুন দুশ্চিন্তা।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা। তখনও শীতে কাপছিল কাকলী ও কাকন। এর কিছুক্ষণ পরই বন্ধ হলো তাদের কাঁপুনি। কারণ দুই ভাই-বোনের হাতে তখন শীতের নতুন জ্যাকেট।

এদিকে, কাঁপুনির চিন্তা তখন কোন ছাড়। নতুন জ্যাকেটের আনন্দে আত্মহারা কাকলী ও কাকন। ওদের মনে বাঁধ ভাঙা ঢেউয়ের উল্লাস। জ্যাকেট পেয়ে ওরা যেন দুনিয়া জয় করে নিয়েছে।

বুধবার বগুড়া ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এমন ৩০ জন স্কুলপড়ুয়া শিশুর হাতে জ্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। রং-বেরংয়ের জ্যাকেট পেয়ে শিশুরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে।

বগুড়া প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব শিশুদের হাতে জ্যাকেট তুলে দেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আজগর তালুকদার হেনা।

এ সময় বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি যাহেদুর রহমান যাদু, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ঠান্ডা আজাদ, শফিউল আযম কমল, আব্দুস সালাম, বজলুর রশীদ সুইট, সঙ্গীত রায় বাপ্পী, সাইফুল ইসলাম, কাওছার উল্লাহ আরিফ, আবু সাঈদ হেলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জ্যাকেট পাওয়াদের মধ্যে মাহিন, ইউনুছ, শাওন, ইমদাদুল, আরিফুল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। শহরের বিভিন্ন স্কুলে লেখাড়া করে তারা।

এসব শিশুরা বাংলানিউজকে জানায়, তাদের মায়েরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি, হোটেল ও মেসে কাজ করেন। আর সবার বাবাই রিকশা চালান। সংসারে অভাব, নিজেদের থাকার তেমন জায়গাও নেই। ঝুপড়ি ঘরে মা-বাবার সঙ্গে বসবাস তাদের।

অভাবের কারণে ভালভাবে খাবার জোটে না। সেইসঙ্গে ভালো পোশাক ও পড়াশোনার খরচাও ঠিকমতো দিতে পারেন না বাবা-মা। শীতের কাপড় তো আর দূরের।

নতুন জ্যাকেট পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তারা একে-অপরের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। শাওন বলে,  তার বাবা খোরশেদ আলম রিকশা চালান। মা সালমা বেগম পুরি বিক্রি করেন। তাই বাবা-মায়ের সামর্থ্য নেই শীতের কাপড় কিনে দেওয়ার। তাই নতুন জ্যাকেট পেয়ে খুব ভাল লাগছে। এখন আর শীতে কষ্ট হবে না তার।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
এমবিএইচ/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।