ময়মনসিংহ : সমস্যার অন্ত নেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে। তবে সব সমস্যা ছাপিয়ে হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে এখন রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে উঠেছে হাসপাতালের লিফটগুলো।
গত মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে লিফট কাণ্ডের পর নগরজুড়ে আবারো আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে হাসপাতালের এই লিফট গুলো।
মঙ্গলবার বিকেলে লিফট বিভ্রাটের জেরে দুর্ঘটনায় জখম হন ময়মনসিংহের ত্রিশালের ধানীখোলা ইউনিয়নের জসিম উদ্দিন নামে এক রোগী। এরপর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওই লিফট।
এ বিষয়ে রোগীর স্বজনেরা বাংলানিউজকে জানান, ট্রলিতে করে জসিমকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। লিফটে পুরোপুরি ওঠার আগেই উপড়ে উঠতে শুরু করে। কিন্তু তখনো লিফটের বাইরে বেরিয়ে ছিল ট্রলির অর্ধেক অংশ। এ অবস্থায় লিফট উঠতে থাকলে লিফট থেকে ছিটকে পড়েন ওই রোগীর স্ত্রী।
আর ভেতরে আটকা পড়েন রোগীসহ ৫ জন। পরে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় দু’ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
এ তো গেলো সাধারণ রোগীদের ভোগান্তির কথা। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে এবং একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে লিফটে আটকা পড়েছিলেন ওই সময়কার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকির। পরে টেকনেশিয়ান এনে দু’বারই তাকে বিকল্প ব্যবস্থায় উপরে উঠানো হয়।
এদিকে হাসপাতালের পুরনো লিফট বিভ্রাটের ঘটনা জানেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। লিফটে আটকে পড়ার ভয়ে হাসপাতালটির লিফটগুলোতে ওঠার সাহস পান না তারা। তাই ভোগান্তি ও দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখেই তারা লিফট এড়িয়ে সিঁড়ি দিয়েই দু’তলা, তিনতলা কিংবা চারতলায় উঠা-নামা করেন। এমনটাই জানালেন হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী।
হাসপাতালের নার্স ফাতেমা খাতুন জানান, মাসখানেক আগে হাসপাতালের একটি লিফটে মিনিট দশেক আটকা ছিলেন তিনি। এরপর থেকে আর লিফটে ওঠেন না।
তিনি বলেন, ঝক্কি ও যন্ত্রণার জন্যই লিফটে উঠা বাদ দিয়েছি।
তার কথার খেই ধরে একই কথা জানালেন হাসপাতালটির আরেক নার্স অঞ্জলি।
তিনি বলেন, এ হাসপাতালের লিফটের কোনো ভরসা নাই। অটোমেটিক লিফট আটকে যায়। আবার খুলেও যায়।
জানা যায়, এ হাসপাতালের বেশিরভাগ লিফটই পুরনো। অধিকাংশ সময়েই অনেক লিফট থাকে বিকল। এসব লিফটে নেই বৈদ্যুতিক পাখা। গরমের সময়ে নাজেহাল হতে হয় রোগীদের। মাঝে মধ্যেই বন্ধ থাকে অনেক লিফট। আবার কোনো কোনো সময় লিফটে থাকেন না লিফটম্যানরা।
এতো ভোগান্তি ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তারা লক্কর-ঝক্কর এসব লিফট সচল করতে পারছেন না। এতে করে ১ হাজার শয্যার এ হাসপাতালটিতে নিত্য আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের ভুগতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন জানান, গোটা হাসপাতালে ১৬টি লিফট রয়েছে। অনেক বছর আগের হওয়ায় ৫ থেকে ৬টি লিফট ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, টাকার অভাবেই এসব লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটি সারানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে এসব লিফট সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
একই বিষয়ে ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ.কে.এম.কামরুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে একটি লিফটের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন মিলেছে। পর্যায়ক্রমে বাকী লিফটগুলোরও অনুমোদন মিলবে বলে আশা রাখি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
আরএইচএস/বিএস