ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ছেলে মেয়েরা যেন জঙ্গিবাদের দিকে যেতে না পারে

মহিউদ্দিন মাহমুদ, নাসির উদ্দিন ও আবদুল্লাহ আল নোমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
ছেলে মেয়েরা যেন জঙ্গিবাদের দিকে যেতে না পারে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ থেকে:  কোনো ছেলে মেয়ে যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের কোনো স্থান হবে না।


 
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
 
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা সজাগ থাকবেন, আপনাদেরও লক্ষ্য রাখতে হবে। কোনো ছেলে মেয়ে, কেউ যেন ওই সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কাজে যেতে না পারে। ’
 
‘তারা যেন শান্তিতে জীবন-যাপন করতে পারে। সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ’
 
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় সহিংসতায় জড়িতদের বিচার করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। ’
 
তিনি বলেন, ‘যেখানে যেখানে পোড়ানো হয়েছে সেখানে সেখানে মামলা হয়েছে এবং প্রত্যেকের বিচার হবে। প্রত্যেকের বিচার বাংলার মাটিতে আমরা করবো। ’
 
খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ যখন উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়, মানুষ যখন সুখে শান্তিতে থাকে, মানুষের জীবনে যখন শান্তি ফিরে আসে, আমরা দেখি একজনের মনে খুব অশান্তি দেখা দেয়। ’
 
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ ও ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকালীন সহিংসতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাসের হেলপার, ড্রাইভার, সাধারণ মানুষ, বাসের যাত্রী, ট্রেনের যাত্রী, লঞ্চের যাত্রী কেউ রেহাই পায়নি খালেদা জিয়ার সেই প্রতিহিংসার হাত থেকে। ’
 
‘ছোট্ট শিশু তারাও রেহাই পায়নি। তাদেরকেও পুড়িয়েছে। মায়ের সামনে বাবা-মেয়ে পুড়ে মারা গেছে। ’
 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই এদেশের মানুষের জীবনে শান্তি। আর ওরা চায় অশান্তি। ’
 
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ চায় এদেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হোক। ’
 
একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার শুরু ও বিচারের রায় কার্যকরের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিচার অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ কুলুষমুক্ত হবে, বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা ফিরে আসবে। ’
 
‘একদিকে আমরা বিচার কাজ চালাচ্ছি। অন্যদিকে দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। ’
 
সবাইকে সরকারের ওপর ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে দাবি করা লাগবে না। বাংলার আনাছে-কানাছে ঘুরেছি। এদেশের মানুষে সমস্যা কী, তা আমার জানা, সমাধান করে দেশকে উন্নত করতে হবে, কীভাবে সেটাও আমরা জানি। সেইভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’
 
এসময় তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন ‘আমাদের ওপর ভরসা আছে তো?’ তখন জনতার মাঝ থেকে ‘জ্বী’ বলে উত্তর আসে।
 
আগামী দিনগুলোতেও নৌকা মার্কায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তারা দুই হাত তুলে ভোট দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা শান্তি দেবে, সমৃদ্ধি দেবে, উন্নতি দেবে। নৌকাই এদেশের মানুষের মুক্তি এনে দেবে। ’
 
স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ কাজ করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
 
উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার সংকল্প ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এ জাতি নিম্নবিত্তে থাকতে পারে না। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। ’
 
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী বাংলার জনগণের সংগঠন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়, তার কারণ আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা এনেছে। আরা যারা উড়ে জুড়ে ক্ষমতায় বসে, তারা আসে লুটপাট করতে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করে। তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। ’
 
অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় পাঁচ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তে উঠে এসেছে। আমাদের রিজার্ভ এখন ২৭ বিলিয়ন ডলার। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। জাতির পিতা  এটা আগেই বলে গেছেন। আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। ’
 
শিক্ষাখাতের উন্নয়নেও প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এক কোটি ২৮ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি এবং উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। এবারও ঠিক সময়ে শিশুদের হাতে হাতে বই পৌঁছে দিয়েছি। ’
 
আধুনিক শিক্ষা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষাকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
 
ভবিষ্যতে সিলেটে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো না। ঢাকায় আমরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। ’
 
চারটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও কৃষি গবেষণার ওপর সরকারের গুরুত্ব দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
 
শিক্ষার্থীদের মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। সেই ‍সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। ’
 
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা দেড় কোটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করছি। কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতকে উম্মুক্ত করে দিচ্ছি। ’
 
তিনি বলেন, ‘কেউ বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে না, সারা বাংলাদেশে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। যেখানে বিনিয়োগ হবে, শিল্প কলকারখানা হবে, মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ’
 
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের ঘোষণা ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। ’
 
মোবাইল ফোনে যোগাযোগের সুবিধা ও সরকারের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘থ্রি জি চালু হয়েছে, আগামীতে ফোর জি চালু হবে। ’
 
সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধি কোনো সরকার কোনো দিন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। ’
 
সিলেট বিমানবন্দরের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিলেট বিমানবন্দরকে আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করেছি। এখানে বিমান রিফুয়েলিং দ্রুত শুরু করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’
 
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
 
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরী, সিলেট মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সৈয়দা জেবুন্নাহার প্রমুখ।
 
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ জনসভা পরিচালনা করেন।
 
এদিকে, দুপুর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখতে ও তার ভাষণ শুনতে জনসভাস্থলে জনতার ঢল নামে। ঢাকঢোল আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভায় জড়ো হন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নগরীর বাইরে গ্রাম থেকেও লোকজন জড়ো হয় সভায়।
 
প্রধানমন্ত্রীর আগমনে সিলেট আওয়ামী লীগ পরিবারসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে জাগরণের সৃষ্টি হয়।
 
এর আগে, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করে। সিলেট পৌঁছেই হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরানের (রহ.) মাজার জেয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
মাজার জেয়ারতের পর সিলেট মদন মোহন কলেজের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি।
 
সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথমবারের মতো সিলেট সফরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে গোটা শহরে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
এমইউএম/এইচএ

** ‘এইটুকু ভরসা আমাদের ওপর রাখবেন’
** সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
** মানুষ হত্যাকারী প্রত্যেকের বিচার করবো
** উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি
** জনসভা মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী
** সিলেটে ২২ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর প্রধানমন্ত্রীর
** সব মিছিল মিলছে আলিয়া মাদরাসা মাঠে
** উন্নত দেশ গড়তে শিক্ষার বিকল্প নেই
** স্বাক্ষরতার হার করবো শতভাগ
** শাহজালাল ও শাহপরান মাজার জিয়ারত করলেন প্রধানমন্ত্রী
** শাহজালালের মাজার জিয়ারত করলেন প্রধানমন্ত্রী
** সিলেটে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
** প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় সিলেট

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।