খুলনা: যেকোনো বাঙালি শিশুর জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য জানা খুবই জরুরি। বাংলাদেশের একটি শিশুকে আত্মসম্মানবোধ নিয়ে বেড়ে ওঠার জন্য ১৯৭১ সম্পর্কে জানতেই হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় খুলনা মহানগরীর বয়রায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক টি এম জাকির হোসেন বাংলানিউজকে এ কথা জানান।
তিনি জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর খুলনা বিভাগের ৩ হাজার ৯শ’ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল-মাদরাসার প্রধান বরাবর একটি নোটিশ দিয়েছেন তিনি। সেখানে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচিত্র প্রদর্শন ও মুক্তিযোদ্ধার মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধের গল্প শোনানোর কথা বলা হয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর রায়ের মহল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাসব্যাপী এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা এ কর্মসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান ও শিক্ষার্থীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। ৩ হাজার ৯শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩০ শিক্ষার্থী এ গল্প শুনছে।
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক গল্প জানার এসব অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি নিজেও অংশগ্রহণ করছেন বলে জানান মাউশি খুলনার এ আঞ্চলিক উপ-পরিচালক।
কী ধরনের গল্প ও ভিডিওচিত্র শিক্ষার্থীদের শোনানো এবং দেখানো হচ্ছে জানতে চাইলে জাকির হোসেন বলেন, আমি একটি তালিকা তৈরি করে শিক্ষকদের কাছে পাঠিয়েছি। এরমধ্যে রয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, বাঘা বাঙালি, আমার বন্ধু রাশেদ, ওরা এগারো জন, আগুনের পরশমনিসহ উল্লেখযোগ্য ভিডিও-চলচ্চিত্র। রয়েছে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা কেন এবং কীভাবে মুক্তিযদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তা গল্প আকারে বর্ণনার কথাও।
তিনি জানান, কোমলমতি শিশুদের গল্প ভালো লাগে। সে কারণে এ অনুষ্ঠানের নামও দেওয়া হয়েছে ‘এসো মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলি’।
কেন এ উদ্যোগ- জানতে চাইলে মাউশির এ আঞ্চলিক উপ-পরিচালক বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন স্কুলজীবন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেজন্যই এ উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগী শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধারা যে অতিসম্মানীয় সেটা যেন শিশুরা বুঝতে পারে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নিমর্মতা, নির্যাতন, গণহত্যা এবং নারীদের সম্ভ্রমহানির বিষয়গুলোও শিশুদের জানতে হবে। এগুলো এড়িয়ে যাওয়ার নয়, লুকিয়ে রাখারও নয়। শিশুরা যেন ছোটবেলা থেকেই জঙ্গিবাদ ঘৃণা করে। সেজন্য তাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে আদর্শিত করতে হবে।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে জাকির হোসেন বলেন, শিশুরা যখন ভাষা শিখতে শুরু করে তখন থেকেই শিশুদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সত্য ঘটনাগুলো গল্প আকারে বলা যেতে পারে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস ইত্যাদি দিনগুলোর সঙ্গে শিশুকে পরিচিত করানো যেতে পারে।
তিনি আরও পরামর্শ দেন, শিশুকে জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বধ্যভূমি, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ইত্যাদি সম্পর্কে জানানো যেতে পারে। জাতীয় পতাকা দেখানো, বাড়িতে জাতীয় পতাকা রাখা আর শুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত শোনানো, জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সংগীতকে কীভাবে সম্মান জানাতে হয় তা শেখানো যেতে পারে। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প, কবিতা, মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি, ডায়েরি পড়তে দেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
এমআরএম/এইচএ/