ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ওদের শীত নেই, রাতও নেই

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
ওদের শীত নেই, রাতও নেই ছবি: কাসেম হারুন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত কমছে তাপপাত্রা। উত্তুরে হাওয়ায় আগুন নিভে যেতে চাইছে।

তারপরও ঢাকার পথে কাগজ, কাঠ বা প্লাস্টিক কুড়িয়ে এনে হলেও আগুনের আঁচ ধরে রাখার চেষ্টা। এই শীতের রাতেও যে কামরাঙ্গীর চরের বস্তিতে যেয়ে দান পাওয়া কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর উপায় নেই। সকাল হলেই কিস্তির নয়শ’ টাকা জমা দিতে হবে রিকশাওয়ালা আল-আমিনকে।
 
আজিমপুর কবরস্থানের সামনের রাস্তায় আগুন পোহাচ্ছিলেন ছয়জন রিকশাওয়ালা। তাদেরই একজন আল-আমিন বাংলানিউজকে জানান, তাদের সবাই কামরাঙ্গীর চরে বস্তিতে থাকেন। সেখানে ভাড়া খুব কম। তাই শহরের ভেতরে রিকশা চালালেও থাকেন সেখানে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন, ফিরবেন রোববার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে।
 
শীতে কাপঁছে রোগা শরীরগুলো। তাদেরই একজন নুরুল আমিন। তার বাড়ি গাইবান্ধা। তিনি বলেন, এই রকম শীত হামাগের এলাকায় পড়ে। এইবার শহরেও পড়ছে।

কিছুক্ষণ আগুন পোহানোর পরই আবার রিকশা চালাবেন, ‘ক্ষ্যাপ’ পেলে। বা কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়েও নিতে পারেন।
 
আল-আমিন জানান, নিজে কিস্তিতে একটা রিকশা কিনেছিলেন। রিকশাটা চুরি হয়ে গেছে। তবে প্রতিদিন ৯০০ টাকা করে শোধ করতে হচ্ছে কিস্তি। তাই দৈনিক একশ’ টাকা রিকশা জমার খরচ মিটিয়েও বাড়তি টাকা আয় করতে হয় তাকে।
 
বরিশালের জয়নাল বলেন, এ ধরনের ধার-দেনা সবারই আছে। ফলে এই তীব্র শীতকে উপেক্ষা করেও রিকশা চালাতে হচ্ছে। তবে আল-আমিনের কম্বলের চাহিদার কথা শুনে তিনি বলেন, কম্বল দিলেতো বিক্রি করে ফেলো। আল-আমিনের জবাবটাও ভালো। বললেন, কম্বল বিক্রি করেওতো জামা কেনা যায়।
 
দফায় দফায় ‍আকাশ নিঙড়ানো বৃষ্টি আর হিমালয় ছুঁয়ে ‍আসা উত্তুরে হাওয়া হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে সারা দেশে। এই কাঁপন চলতি সপ্তাহে আরো বাড়বে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
 
এতে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহ জুড়েই থাকবে শীতের দাপট। শনিবার রাত (২৩ জানুয়ারি) থেকেই তাপমাত্রা আরো কমতে থাকবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি, এমনকি ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে নেমে যেতে পারে।
 
তবে তিন চাকার যানবাহন চালকদের কিন্তু শীতের কাছে পরাজিত হলে চলে না। সিএনজি বা অন্য বাহনের চালকদের চেয়ে কিছুটা বেশি শীতে কাবু হতে হয় তাদের। খোলা আকাশের নীচে বাতাসের সঙ্গে লড়াই করেই এগোতে হয় তাদের। রাতের কথা, শীতের কথা ভাবলে চলে না।
 
রাজধানীর কারওয়ান বাজারকে কেন্দ্র করে চলছে ভ্যান চালকদের আসা-যাওয়া। তারাও শীতের দমকা বাতাসকে পাত্তাই দিচ্ছেন না, প্যাডেলের ওপর শক্ত পায়ের চাপে।
 
বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল মোত্তালেবকে দেখা গেলো, নিজেই কাগজ কুড়িয়ে এনে আগুনের ব্যবস্থা করছেন। একাই পুরো মার্কেট এলাকা পাহারা দেন তিনি। ২ বছর ধরে এখানে গার্ডের চাকরি করছেন। রাত ১০টা থেকে পরের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ডিউটি।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গরীবের রাতই কী! আর শীতই বা কী!
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
এমএন/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।