শেরপুর: বাংলাদেশ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান কেএম শফিউল্লাহ জানিয়েছেন, এখন থেকে সোহাগপুর গণহত্যাস্থলের নতুন নাম হবে ‘বীরকন্যা পল্লী’।
বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি বিজড়িত সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে বিধবাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও শীতবস্ত্র বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিউল্লাহ বলেন, যাদের রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি, তাদের রক্তে রঞ্জিত পবিত্র এ ভূমি বিধবাপল্লী হতে পারে না। এখানকার সবাই বীরকন্যা। আজ থেকে আর বিধাবাপল্লী নয়। এখন থেকে সোহাগপুর গণহত্যাস্থলের নতুন নাম হবে ‘বীরকন্যা পল্লী’।
তিনি জামায়াতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা যখন যুদ্ধ করেছি তখন তারা পাকিস্তানের পক্ষে, আর আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এই সংগঠনের লোক কখনও বাঙালি হতে পারে না, আমরা তাদের নাগরিকত্ব চাই না। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, এদেশে আমরা থাকবো, পাকিস্থানপন্থি কেউ থাকতে পারবে না।
এসময় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলছি পাকিস্তান যে ভাবে কথা বলেছে, বাংলাদেশের কিছু নেতা-নেত্রী ঠিক সেই ভাবে কথা বলছে। তারা নতুন করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বির্তক তুলছে। আমরা সেক্টর ফোরামের পক্ষ থেকে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই, যারা পাকিস্তানের সরকারের পক্ষ হয়ে এদেশে নতুন করে কথা বলার চেষ্ঠা করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করছে। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সময় এসেছে।
আজ এই বিধবাপল্লিতে দাঁড়িয়ে নতুন করে পাকিস্তানের কাছে দাবি করছি, অবিলম্বে বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। যদি তারা ক্ষমা চাইতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারের কাছে দাবি জানাবো অবিলম্বে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
বাংলাদেশ সেক্টর কমান্ডাস ফোরামের নেতারা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একাত্তরে স্বজন হারানো সোহাগপুরের বিধবাপল্লীতে আসেন। বিধবারা অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এসময় এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান কেএম শফিউল্লাহ, সাবেক সেনাপ্রধান বীরপ্রতীক হারুন অর রশিদ, সেক্টর কমান্ডারসের মহাসচিব হারুণ হাবিব, ঢাকা বিভাগের সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি একে আজাদ পাটোয়ারী ছাড়াও এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ মুকুল, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
পরে ৩০জন বিধবার মধ্যে দু’টি করে কম্বল ও একটি করে সোয়েটার বিতরণ করা হয়।
আলোচকরা এসময় সোহাগপুরের বিধবাদের সঙ্গে ৪৪ বছর পর দেখা করার জন বাংলাদেশের সেক্টর ফোরামের নেতারা বিধাব মায়েদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেক্টর ফোরাম এই বিধবাদের পাশে থাকবেন বলেও প্রতিশ্রুত দেন।
পরে বিকেল ৫টার দিকে কাকরকান্দি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম শেরপুর জেলা কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন। কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে আখতারুজ্জামান, সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল হালিম, জেলা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য সচিব হারেজ আলী, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মাওলা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী সোহাগপুর গ্রামে পাকহানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় ৬ ঘণ্টার তাণ্ডব চালিয়ে গুলি করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ১৮৭ জন পুরুষ মানুষকে হত্যা করে। এরপর থেকেই পুরুষ শূন্য সোহাগপুর গ্রামটির নাম পাল্টে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সোহাগপুর বিধবাপল্লী নামে পরিচিতি লাভ করে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
এসএইচ