ঝিনাইদহ: মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
আকাশে ওড়ে লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা। মুক্তির মিছিল ছড়িয়ে পড়ে জেলা থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ঝিনাইদহে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয় সদর উপজেলার বিষয়খালীতে। এছাড়া শৈলকুপা থানা আক্রমণ, কামান্না, আলফাপুর ও আবাইপুরের যুদ্ধ আজও স্মৃতিতে অম্লান।
ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মকবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝিনাইদহ দখলের উদ্দেশে এগিয়ে আসতে থাকলে বিষয়খালী ব্রিজের এপার থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাধা দেন।
তিনি আরও জানান, ১৬ এপ্রিল হানাদার বাহিনী আবারো বিষয়খালী বেগবতী নদীর তীরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল বাধার মুখে পড়ে। এখানে প্রায় ছয় ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ব্রিজের পাশেই তাদের গণকবর দেওয়া হয়। এ থেকেই জেলায় ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধ। বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের।
উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে ছিল- বিষয়খালী যুদ্ধ, কামান্না, আলফাপুর ও আবাইপুরের যুদ্ধ, গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ ও শৈলকুপা থানা আক্রমণ।
ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ১৬ এপ্রিল বিষয়খালী যুদ্ধে ৩৫ জন, ১৪ অক্টোবর আবাইপুর যুদ্ধে ৪১ জন, ২৬ নভেম্বর কামান্না যুদ্ধে ২৭ জনসহ ঝিনাইদহ জেলায় ২৭৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
এদের মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে দু’জন। তারা হলেন- বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ও বীর প্রতীক সিরাজুল ইসলাম।
৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ জেলা শহর শত্রু মুক্ত হয়। এর আগে ৩ ডিসেম্বর মহেশপুর, ৪ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর, ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ এবং সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর শৈলকুপা উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ঝিনাইদহ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর জেলা কমান্ডার আমির হোসেন মালিতা বাংলানিজউকে জানান, মিত্র বাহিনী ঝিনাইদহের হলিধানী বাজারে খবর নিতে আসে। মিত্র বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কর্নেল বাহেল ও লে. কর্নেল পিকে দাস গুপ্ত।
৫ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী ঝিনাইদহ শহরের চারপাশে অবস্থান নেন। গোলাবর্ষণ করতে থাকে পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর। ৬ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানি সেনারা ঘাঁটি ছেড়ে মাগুরার দিকে পালিয়ে যায়। অনেককে বন্দি করা হয়। এভাবেই ঝিনাইদহ জেলা হানাদার মুক্ত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
বিএসকে/পিসি