ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কড়াইল বস্তির বিত্তশালী সুরুজের শেষ সম্বল লুঙ্গি!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৬
কড়াইল বস্তির বিত্তশালী সুরুজের শেষ সম্বল লুঙ্গি! ছবি: সুমন শেখ, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘১৯ বছরের কামাই,এক দিনের আগুনে নিঃস্ব কইরা দিলো। ৩২টা ঘর, কিছু জমানো টাকা, ব্যবাক শেষ, আছে শুধু পিনদোনের লুঙ্গিটা। এখন দাড়ানোর কোনো জায়গা নেই!'

ঢাকা: ‘১৯ বছরের কামাই,এক দিনের আগুনে নিঃস্ব কইরা দিলো। ৩২টা ঘর, কিছু জমানো টাকা, ব্যবাক শেষ, আছে শুধু পিনদোনের লুঙ্গিটা।

এখন দাড়ানোর কোনো জায়গা নেই!'

কথাগুলো সুরুজ ভান্ডারির। কড়াইল বস্তির বাড়িওয়ালা ও বিত্তশালী বলা হয় যাদের তাদের মধ্যে অন্যতম এই সুরুজ ভান্ডারি। রোববার (০৪ ডিসেম্বর) কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুনের লেলিহান শিখা যা এক নিমিষেই সর্বশান্ত করে উন্মোক্ত আকাশের বাসিন্দা করেছে।
 
১৯ বছর আগে খালি হাতে কিশোরগঞ্জ থেকে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে আসেন সুরুজ। প্রথমে রিকশা চালিয়ে উপার্জন শুরু করেন। এরপর নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে, পরে রাজমিস্ত্রির কাজ করে টাকা জমিয়ে ৩২টি ঘর বানিয়েছিলেন এই কড়াইল বস্তিতে। প্রতিটি ঘর থেকে ভাড়া বাবদ মাসে প্রায় ২ হাজার টাকা করে আসতো। এতে মাসে তার আয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এ টাকায় সংসার চালাতেন তিনি।

সুরুজ ছোট্ট মাজার বা আসনও চালাতেন। যেখানে বস্তিবাসীরা এসে জিকির- ইবাদত বন্দেগি করতেন। আসন চালানো ৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে তার। এগুলোর মধ্য রয়েছে ধর্মীও গ্রন্থ,কাঁসার বাসনপত্রসহ আরো অনেক কিছু।

সুরুজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘দ্যাশের বাড়িতে জায়গা -জমি কিচ্ছু  নাই, ১৯ বছর ধরে যত ইনকাম করেছি সব দিয়ে ঘরগুলো বানাইছিলাম, গতকাইলের আগুনে সব শ্যাষ হইয়্যা গেছে। বাকি আছে জানটা। সরকার যদি আমগো সাহায্য না করে আর খাড়া হওনের উপায় নাই। ’

সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) গুলশান-বনানী মাঝামাঝিতে অবস্থানরত কড়াইল বস্তি সরোজমিন ঘুরে গতকালের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের খোলা আকাশের নিচে বিপন্ন জীবন- যাপনের চিত্র দেখা যায়। আর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা খাবার ও পুরান কাপড়ের আশায় বসে থাকতে দেখা যায় বিপন্ন মানুষগুলোকে।

সারাদেশ থেকে আসা নিম্ন আয়ের মানুষজনের আবাসস্থল কড়াইল বস্তি। আগুনে সর্বশান্ত হয়ে তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তার অথৈ সাগরে। অগ্নিকাণ্ডের পর ধ্বংসস্তূপের মাঝে খোলা আকাশে তাবু টাঙ্গিয়ে রাত যাপন করছেন তারা। ক্ষুধা নিবারণে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় বাসিন্দা ও নেতাদের দিয়ে যাওয়া পাতলা খিচুরি যাদের একমাত্র ভরসা।

আগুনে যারা পরনের কাপড় ছাড়া কিছু বাঁচাতে পারেন নি তারা শীতকাল হওয়ায় আরো বিপদে পড়েছেন।
 
রিকশা চালক শ্যামল দাশ। কড়াইল বস্তির একজন ভাড়াটিয়া। আগুন লাগার সময় তিনি বস্তিতে ছিলেন না। খবর শোনে এসে দেখেন, বিছানা, লেপ-তোষক বাসনপত্র পুড়ে ছাই। কোনো রকমে দেড় বছরের বাচ্চা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন তার স্ত্রী।

সিটি করপোরেশনের বিতরণের জন্য আনা পুরান কাপড়ের গাট্টিতে থেকে একটা কম্বল পাবার আশায় এসেছেন শ্যামল।

তিনি বলেন, বাচ্চাটার গায়ে একটা পাতলা গেঞ্জি ছিলো। আর কিছু বাঁচাইতে পারে নাই। ছোট্ট বাচ্চা শীতে কষ্ট পাইতেছে, একটা কম্বলের আশায় ঘুরতেছি। ভগবান যদি দয়া করেন।

দোকানে ৩ লাখ টাকার মালামাল ছিলো কাপড় ব্যবসায়ী সুমনের। দোকানের পেছনে থাকার ঘর। সুমনের দোকানের সঙ্গে সঙ্গে ঘরও পুড়ে ছাই।
সরকার বা কোনো সংস্থার আর্থিক সাহায্য ছাড়া আমাগো আর জীবন চালানোর ক্ষমতা নেই। কত কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে দোকানটা দিছিলাম। সব শ্যাষ হইয়্যা গেল। ক্যামনে কি করুম ভাবির পাইছি না' বলে অসহায় কথাগুলো বলেন সুমন।

রোববার কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট পুড়ে যায়। এতে প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ নিজেদের শেষ সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে বলে জানায় কড়াইল বাসী।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
এমসি/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।