ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৯ নভেম্বর থেকেই ত্রুটিতে রাঙাপ্রভাত, জানতেন উর্ধ্বতনরাও

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৬
৯ নভেম্বর থেকেই ত্রুটিতে রাঙাপ্রভাত, জানতেন উর্ধ্বতনরাও

গত ৯ নভেম্বরেই ত্রুটি ধরা পড়ে রাঙাপ্রভাতে। এরপর ১৫ দিন পার করে সেই ত্রুটিযুক্ত উড়োজাহাজে করেই হাঙ্গেরির পথে উড়িয়ে নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

ঢাকা: গত ৯ নভেম্বরেই ত্রুটি ধরা পড়ে রাঙাপ্রভাতে। এরপর ১৫ দিন পার করে সেই ত্রুটিযুক্ত উড়োজাহাজে করেই হাঙ্গেরির পথে উড়িয়ে নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

যা স্রেফ ভুল কিংবা অবহেলা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বলে মনে করছে এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। তারা ঘটনাটি ‘নাশকতা’ হতে পারে এমন জোরদার সন্দেহ সামনে রেখেই তদন্ত কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।

দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কমিটি জানতে পেরেছে উড়োজাহাজটি আগে থেকেই ত্রুটিযুক্ত ছিলো। আর তা বিমানের উর্ধ্বতনরা ওয়াকিবহাল ছিলেন।

বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছেও এখন স্পষ্ট। কমিটি এও জেনেছে শেষ পর্যন্ত বিমানটি ত্রুটিমুক্ত হয়েছে কি না? কিংবা সেটি উড্ডয়নের যোগ্য হয়েছে কি না? সে বিষয়ে খোঁজ-খবর না নিয়েই উর্ধ্বতনরা রাঙাপ্রভাতকে বিজি-১০১১ করে ভিভআইপি ফ্লাইট হিসাবে ঘোষণা দেন।

আর সেটিতে করে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কয়েকজন মন্ত্রী, সচিবসহ দেড় শতাধিক মানুষ চরম বিপদের মুখে পড়েন। পরে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে রাঙাপ্রভাত।

সূত্র জানিয়েছে, তদন্তকারীরা এরই মধ্যে রাঙাপ্রভাতে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এবং এর যান্ত্রিক খুঁটিনাটি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। ইঞ্জিন অয়েলের যে ট্যাংকটিতে নাট ঢিলা ছিলো, সেটি আকাশে হয়নি, উড্ডয়নের আগে থেকেই তা ঢিলা ছিলো এমনটা নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা।

টেকশিয়ানের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করেছেন, আকাশে ওড়ার সময় ওই নাটে এমন কোনও চাপ পড়ে না যাতে তা আকাশে ঢিলা হয়ে যেতে পারে। গ্রাউন্ড থেকেই নাট ঢিলা নিয়ে আকাশে ওড়ে রাঙাপ্রভাত।

তদন্তে আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে সেদিন ভারতের আকাশে থাকার সময়েই পাইলট ইঞ্জিন অয়েল ট্যাঙ্কারের ত্রুটি দেখতে পান। এতে এরপর কেনো তিনি সেটি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের আকাশ দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেলেন, সেটিও বড় প্রম্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন বাংলানিউজকে বলেন, তারা এটাও নিশ্চিত হয়েছেন, ওই দুপুরে আর ১৫-২০ মিনিট আকাশে উড়লে উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যেতে পারতো। যার পরিণতি হতো স্রেফ ভয়াবহ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ওই দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, উড়োজাহাজটির ত্রুটির কথা উর্ধ্বতনদের জানা থাকা সত্বেও সেটি ত্রুটিমুক্ত কি না তা না জেনে ভিভিআইপি ফ্লাইট ঘোষণা, আর ত্রুটি ধরা পড়ার পড়েও পাইলটের ফ্লাইটটি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া এই দুটি বিষয়কে তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।

তারা বলছেন, এটি যে মনুষ্য সৃষ্ট তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখন দেখতে হবে সেটি কি স্রেফ ভুল ছিলো, নাকি অবহেলা, নাকি নাশকতার কোনও পরিকল্পনা।

এদিকে ঘটনা তদন্তে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গঠিত চার সদস্যেরে কমিটিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এনএসআই’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান।

সোমবার তাকে অন্তর্ভূক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে দায়িত্বশীল সূত্র মতে, আরও আগে থেকেই ঘটনাটি তদন্তে কাজ শুরু করেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়া।

এই সেনা কর্মকর্তা এর আগে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে সুনামের সঙ্গে  দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি এনএসআই’র পরিচালক পদে যোগ দেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াকে তদন্ত কমিটিতে পাঠানোর পর তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়ও সাত কর্মদিবস বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ধারনা করা হচ্ছে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়া যোগ দেওয়ার পর তদন্তের কাজ জোরদার হবে এবং দ্রুতই প্রকৃত সত্য দেশবাসী জানতে পারবে।  

এর আগে গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিমানের ফ্লাইট জরুরি অবতরণের পরদিনই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ঘটনার তদন্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)ও দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুটি কমিটিই এরই মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যার ভিত্তিতে বিমানের ছয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় ১০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬

এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।