ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে তলব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৬
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে তলব

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে তলব করেছেন হাইকোর্ট। তাকে আগামী ১২ ডিসেম্বর হাজির হতে হবে।

ঢাকা: গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে তলব করেছেন হাইকোর্ট। তাকে আগামী ১২ ডিসেম্বর হাজির হতে হবে।

 

সাঁওতালদের ওপর হামলার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দেওয়া একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর) তাকে তলবের আদেশ দেন। ১২ ডিসেম্বর সশরীরে হাজির হয়ে প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত।

এ বিষয়ে করা দু’টি রিট আবেদনের পৃথক পৃথক রুলের শুনানি চলছে এ হাইকোর্ট বেঞ্চে। মঙ্গলবারের শুনানি শেষে সাঁওতালদের পক্ষে করা প্রথম মামলার বাদী স্বপন মূর্মূকেও একই দিন হাজির করতে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন আদালত।  

সাঁওতালদের জান-মাল রক্ষা, নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত ১৬ নভেম্বর আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে প্রথম রিটটি দায়ের করা হয়।
এ রিটের শুনানি নিয়ে পরদিন ১৭ নভেম্বর সাঁওতালদের ধান কাটার সুযোগ দিতে অথবা ধান কেটে সাঁওতালদের বুঝিয়ে দিতে চিনিকল কর্তৃপক্ষসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট বেঞ্চটি।

একইসঙ্গে সাঁওতালদের অবাধে চলাফেরার অধিকার নিশ্চিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি হামলার ঘটনায় ক’টি মামলা হয়েছে, কারা কারা আসামি রয়েছেন সে বিষয়ে ৩০ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলে গাইবান্ধার এসপি ও ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

একইসঙ্গে রুলও জারি করেন আদালত। যাতে সাঁওতালদের জীবন-মান সম্পত্তি রক্ষায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

রিটে বিবাদী করা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, শিল্প সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান, রংপুর সুগার মিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাহেবগঞ্জ সুগারক্যান ফার্মের উপ-মহাব্যবস্থাপক, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে।

গত ৩০ নভেম্বর জেলা প্রশাসক ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অন্যদিকে হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় কমিশন চেয়ে গত ২১ নভেম্বর দ্বিতীয় রিটটি করেন আহত দ্বিজেন টুডোর স্ত্রী অলিভিয়া হেমভ্রম ও গণেশ মুরমোর স্ত্রী রুমিলা কিসকুর পক্ষে ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।

এ রিটের শুনানি নিয়ে পরদিন ২২ নভেম্বর সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গুলি ও হত্যা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট বেঞ্চটি। পাশাপাশি ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

স্বরাষ্ট্র সচিব, শিল্প সচিব, পুলিশের মহাপরির্শক, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার, গোবিন্দগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং মহিমাগঞ্জ সুগার মিলের ম্যানেজারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

মঙ্গলবার আসকের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও জেড আই খান পান্না। দুই সাঁওতালের স্ত্রীর রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. রফিকুর রহমান ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

শুনানিকালে আসকের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন দাবি করেন, সাঁওতালদের পক্ষে করা প্রথম মামলার বাদী স্বপন মূর্মূ সাঁওতাল নন, তিনি মাহালি সম্প্রদায়ের। আর ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিচারিক কমিশন গঠনের আরজি জানান।

আদালত জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখেন, এক পর্যায়ে তিনি ‘বাঙালি দুস্কৃতকারীরা’ বলে উল্লেখ করেছেন। আদালত এরপরই এ শব্দের ব্যাখ্যা দিতে ১২ ডিসেম্বর তাকে সশরীরে হাজিরের আদেশ দেন।

আদালত বলেন, এ ধরনের শব্দ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হতো। তিনি (জেলা প্রশাসক) ‘আইন অমান্যকারীরা’ লিখতে পারতেন।

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, গত ০৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে কলের শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে তিনজন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে।

পরে পুলিশ-র‌্যাব ওইদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মিলের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।