ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীর পাবলিক টয়লেটে আভিজাত্যের ছোঁয়া!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
রাজধানীর পাবলিক টয়লেটে আভিজাত্যের ছোঁয়া! বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাবলিক টয়লেটের অভিজ্ঞতা নগরবাসীর জন্য মোটেও সুখকর নয়। আশ-পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই উটকো গন্ধ জানান দেয় এখানে একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। তাই নগরবাসী পাবলিক টয়লেটের উটকো গন্ধ থেকে পরিত্রাণ পেতে এড়িয়ে চলেন।
 

ঢাকা: পাবলিক টয়লেটের অভিজ্ঞতা নগরবাসীর জন্য মোটেও সুখকর নয়। আশ-পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই উটকো গন্ধ জানান দেয় এখানে একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে।

তাই নগরবাসী পাবলিক টয়লেটের উটকো গন্ধ থেকে পরিত্রাণ পেতে এড়িয়ে চলেন।
 
কারণ এসব টয়লেটের উটকো গন্ধে নাজেহাল হন ব্যবহারকারীরা। অনেক সময় মহিলা টয়লেট থেকে বের হচ্ছেন পুরুষ! এমনকি মহিলা টয়লেটের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে পুরুষ, আবার পুরুষ টয়লেট থেকে বের হচ্ছেন মহিলা।

তবে সম্প্রতি পাবলিক টয়লেটের এই ‘চরিত্র’ পরিবর্তন হয়েছে।
 
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ফার্মগেট ইন্দ্রিরা রোড এলাকায় চোখে পড়েছে আধুনিক পাবলিক টয়লেট। এই টয়লেটে প্রবেশের মুখে নাকে এলো পারফিউমের ঘ্রাণ। চারিদিকে রঙিন আলোকচ্ছটা। পায়ের জুতা খুলেই এ টয়লেটে প্রবেশ করতে হয়। ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কোনো ধরনের ময়লা নেই। মাথার উপরে ঘুরছে সিলিং ফ্যান।

এসব পাবলিক টয়লেটে রয়েছে নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা। পৃথক লকার ও হাত ধোয়ার জন্য পৃথক স্থানসহ লিক্যুইড হ্যান্ডওয়াশ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। পাঁচ টাকার রশিদ গ্রহণ করেই সেবা মিলবে এসব টয়লেটে।
 
গোসলের সু-ব্যবস্থা রয়েছে, এই ক্ষেত্রে খরচা করতে হবে ১০টাকা। শুধুমাত্র ওয়ান টাইম গ্লাস এক টাকা দিয়ে সংগ্রহ করলেই বিশুদ্ধ পানি খাবার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
 
চারিদিকে উন্নত মানের গ্লাস, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও উন্নত মানের কমোড। এসব দেখে মনে হবে অভিজাত হোটেলের কোনো টয়লেট। একজন সেবা গ্রহণ করলেই সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। সেবার মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য ১০জন পরিচ্ছন্ন কর্মী শিফটিং ওয়াইজ দায়িত্ব পালন করছেন।
 
সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য টয়লেটের প্রবেশদ্বারে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। নামাজ ও ওজুর ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। তবে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মানুষজন বিনামূল্যে এখান থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে উন্নত মানের কমোড। এক সঙ্গে মোট ১০জন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন এখানে।
 
ফার্মগেট ইন্দিরা রোড আধুনিক গণশৌচাগারের কনস্ট্রাকশনের কাজ করছে ইউনিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে রয়েছেন লুকমান হাকিম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পাবলিক টয়লেটিতে পুরুষ, মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের আলাদা ব্যবস্থা আছে। টয়লেটটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পরিষ্কারের জন্য সার্বক্ষণিক তিন শিফটে ১০জন কর্মীরা কাজ করছে। অনেকে টয়লেট ব্যবহার করে খুশি। অনেকে বাথরুমতো ব্যবহার করে, আবার দেখতেও আসে।
 
জনসাধারণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।   নগরীতে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। অথচ পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা মাত্র ৬৯টি। অর্থাৎ প্রতি সোয়া দুই লাখ মানুষের জন্য মাত্র একটি পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করছেন। এসব পাবলিক টয়লেটের মধ্যে ৯১ শতাংশই ব্যবহার অনুপযোগী মানুষ যেতে ভয় পান। নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতেই এ আধুনিক পাবলিক টয়লেট।
 
ফার্মগেটের ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন পার্কসহ মহাখালীর ওয়াসা পাম্প সংলগ্ন স্থান এবং শ্যামলী শিশু পার্কে আধুনিক টয়লেটগুলো উদ্বোধন করা হয়েছে।
 
টয়লেটের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব পাবলিক টয়লেটগুলোতে বিশেষ করে সকালের দিকে চাপটা বেশি থাকে। দুপুর এবং সন্ধ্যায়ও চাপ থাকে।
 
আধুনিক ফিটিংস এবং উন্নত সুবিধার কারণে এসব টয়লেটে সেবা গ্রহণকারীরাও অনেক খুশি। তবে এই সেবা কতদিন চলমান থাকে এ নিয়ে শঙ্কায় ব্যবহারকারীরা।

শ্যামলী শিশু পার্কে আধুনিক টয়লেট ব্যবহারকারী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার পাবলিক টয়লেটে যে আধুনিক ‍সুবিধা, তা আমাদের অনেকের বাসা-বাড়িতেও নেই। তবে এই সেবা কতদিন থাকে সেটাই দেখার বিষয়।
 
নগরীরর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা এবং ওয়াটার এইড যৌথভাবে এ টয়লেটগুলো নির্মাণ করে যাচ্ছে।
 
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) আরও ১২টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দু'টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট উদ্বোধন করা হয়েছে।
 
শুধু উত্তর সিটি কর্পোরেশন নয় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেও ১০০টি আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যেই সায়েদাবাদ, পল্টন এলাকায় ৮টি সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১০০ উন্নতমানের আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। স্থান ও মানুষের ব্যবহারের কথা চিন্তা করেই এসব টয়লেটের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত খরচা করে এসব টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে।
 
সেবার মান অক্ষুন্ন রাখতেও নেয়া হয়েছে পরিকল্পনা। আধুনিক টয়লেটগুলোর মান নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ভিত্তিক কিছু কর্মসূচিও গ্রহণ করা হবে।
 
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বাংলানিউজকে বলেন, পাবলিক টয়লেটের বিষয়ে নগরবাসীর নেতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা এ ধারণার পরিবর্তন করতে চাই। ইতোমধেই ৮টি আধুনিক টয়লেট উদ্বোধন করেছি। সব মিলিয়ে ১০০টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করবো। সেবার মান নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করবো। যাতে করে এসব টয়লেটগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যায়।

তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস অভিজ্ঞতার পরিবর্তন করতে পারলেই এসব টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকবে। কারণ টয়লেটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখেই নোংরা করতে বিবেকে বাঁধা দেবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
এমআইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।