ঢাকা: পরবর্তী প্রজন্ম যেন শরণার্থী হওয়ার বেদনাময় অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানালেন সফররত ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর।
শনিবার ( ডিসেম্বর ১০) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) সম্মেলনে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই সাংবাদিক এ সময় ৪৫ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অত্যাচারের শিকার হয়ে বাংলাদেশি শরণার্থীদের ভারতে আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘সেই দুঃখময় অভিজ্ঞতার প্রত্যক্ষদর্শী আমাদের পূর্বপুরুষরা । অামিও তা দেখেছি। আমরা এখানে সমবেত হয়েছি একই কারণে। আমরা চাই পরবর্তী প্রজন্ম যেন একই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার না হয়।
এ সময় জিএফএমডি সম্মেলনের সুষ্ঠু আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির উদ্দেশ্যেও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সম্মেলনে অংশগ্রহণের নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শরণার্থী, অভিবাসী এবং আশ্রয় প্রার্থীদের সমস্যার বিষয়টি এই প্রথম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপিত এবং আলোচনা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা এখানে সমবেত হয়েছে এই ইস্যুতে নিজেদের করণীয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।
এ সময় তিনি একটি ব্রিটিশ প্রবাদ ‘চ্যারিটি বেগিনস অ্যাট হোম’ এর উল্লেখ করে বলেন, আমরা এই সম্মেলনে এসেছি একটি আশা নিয়ে। যেন আমরা এ ব্যাপারে একটি সত্যিকারের সমাধানের পথ প্রদর্শনের উদাহরণ তৈরি করতে পারি।
তিনি এ সময় পবিত্র বেদ থেকে একটি শ্লোক উল্লেখ করে বলেন. ভারত বিশ্বাস করে পুরো বিশ্ব একটি পরিবার।
তিনি আরও বলেন, ‘অভিবাসন ও শরণার্থী সমস্যা এক নয়। তাদের সমস্যা আলাদা, তাই তাদের সমাধানও এক হতে পারে না। আমাদের এ ব্যাপারে আলাদা নীতি, কর্মপরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, অভিবাসন বিষয়ক সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই মুহূর্তে অভিবাসী ২৪৭ মিলিয়ন মানুষ। এ অভিবাসীদের ৯০ শতাংশই নিজেদের দেশের বাইরে রয়েছেন অর্থনৈতিক কারণে। তাদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ শরণার্থী বা আশ্রয় প্রার্থী।
তিনি বলেন, এই অভিবাসীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন যারা বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অভিবাসন বর্তমান পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত পৃথিবীতে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যা পরিচালিত হয় বৈশ্বিক শ্রম বাজারের চাহিদা ও যোগানের স্বাভাবিক সূত্র মেনে।
তিনি ম্যাকেঞ্জি গ্লোবাল রিপোর্টের উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের জিডিপিতে অভিবাসীদের অংশগ্রহণ ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৬.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের সমান। যা বিশ্বের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
এ সময় তিনি নয়দফার একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন। ।
অভিবাসী শ্রমিকদের ঝুঁকির বিষয়ে তিনি সাম্প্রতিক একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বেশিরভাগ অভিবাসী অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। এটি অভিবাসীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ এই সব খাতের বেশিরভাগই নিয়ম নীতির বাইরে। অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক সমস্যা সমাধানের রোডম্যাপে এ ব্যাপারে আলোকপাতের কথাও বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ঢাকায় শুরু হওয়া অভিবাসন বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) সম্মেলন’ এ বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশের সাতশ’র বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। এসেছেন ২০টিরও বেশি দেশের মন্ত্রীরা। পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাও সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।
অভিবাসন ও উন্নয়ন নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে এক দশক আগে জিএফএমডি সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত বছর তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ ডিএফএমডি’র চেয়ারম্যান পদ লাভ করে। চেয়ারম্যান হিসেবেই বাংলাদেশ এবারের সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
আরআই