ঢাকা: কল-কারখানায় কর্মপরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘দক্ষতা, নিয়োগ যোগ্যতা ও শোভন কাজ’ (Dhaka Summit on Skills, Employability and Decent Work – 2016) শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কারখানা করলাম, আর শুধু পয়সা কামাই করবো এমন চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে একটু উদ্যোগী হতে হবে। ’
তিনি বলেন, শিল্প মালিকদের স্ব-স্ব কল-কারখানায় কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অধিক সংখ্যক নারী ও প্রতিবন্ধী নিয়োগসহ শ্রমিকদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নাই বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তরুণদের উদ্যোক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যহত থাকবে।
বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শ্রমঘন খাত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শ্রমবাজারে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢুকছে। তাদের জন্য প্রয়োজন আরও বিপুল সংখ্যক শিল্প, কল-কারখানা এবং সেবা খাতের প্রসার ঘটানো। ’
ব্যয় হ্রাস ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে জনশক্তির দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার সঙ্গে দক্ষতাকে মিলিয়ে নিতে হবে।
অভিবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের চাহিদা ও মজুরি বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করে প্রধানমন্ত্রী। তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদারও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই চাহিদার পূরণের সক্ষমতা অর্জনের জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ’
রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পণ্যের বৈচিত্র্য, গুণগতমান বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণ, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের উন্নতমান, মজুরি বৃদ্ধি ও মূল্য বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, শিখতে হবে বর্তমান পণ্য সামগ্রীতে কীভাবে মূল্য সংযোজন করা যায়। এক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সাল মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। ’
সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সরকার সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষ জনশক্তির যোগান বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উপার্জন সক্ষমতা অর্জন ও আয় বৃদ্ধি দারিদ্র দূরীকরণে সহায়ক হবে। যা অন্যান্য সামাজিক সূচকগুলোকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করবে। ’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) মহাপরিচালক গাই রাইডার, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, বিজিএমই সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশে কানাডার রাষ্ট্রদূত বেনিয়েত পিয়েরে লারামি, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ফস, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব এমপ্লয়ার্সের মহাসচিব লিন্ডা ক্রমইংয়, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট প্রাকটিসের কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা পরিচালক অমিত দার, ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কাস এডুকেশনের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। আর স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি সালাউদ্দিন কাশেম খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬/ আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা
এমইউএম/টিআই