ঢাকা: বাবার মুখে অনেকবারই শুনেছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প, গল্পের প্রত্যেকটা চরিত্র তার মন ছুঁয়ে যায়। অনেক সময় আবার কোনো না কোনো চরিত্রে নিজেকে অবিষ্কার করতে পছন্দ করে।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) গভীর রাতে রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে প্রদীপ জ্বালাতে দেখা গেলে দেখা হয় তার সঙ্গে।
৪র্থ শ্রেণির ছাত্র জিহাদ কেরানীগঞ্জের আটিবাজারে থাকে পরিবারের সঙ্গে। পত্রিকা পড়ে জেনেছে, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে প্রদীপ জ্বালানো হয়। তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, সেও শহীদের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালাবে।
এজন্য কনকনে শীত উপেক্ষা করে মা-বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও মামার সঙ্গে মোমবাতি নিয়ে চলে এসেছে সে।
শহীদের প্রতি ভালোবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে জিহাদ বলে, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই তাদের মেরে ফেলছে, তারা আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী। তাদের বুদ্ধিতেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই মামার সাথে দেখতে আসছি।
বধ্যভূমিতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রাত ১টার দিকে একজন লোকের সঙ্গে এই বালকটি আসে। অনেকক্ষণ ধরে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করেছে। জ্বালানো প্রদীপগুলো বাতাসে নিভে গেলে, সে গিয়ে তা জ্বেলে দিচ্ছে। প্রথমে আমাদের দেখে ভয়ে ভয়ে থাকলেও পরে ভয় কেটে গেলে, নিজের পকেট থেকে মোমবাতি বের করে জ্বালিয়ে দেয়।
জিহাদের মামা রফিকুল ইসলাম (২৮) বাংলানিউজকে বলে, গতকাল থেকে আমাকে বলছে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে যাবে। ওর মা নিষেধ করেছে এই শীতের ভিতর না যেতে কিন্তু আমাকে জোর করে নিয়ে চলে এসেছে।
রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা রায়ের বাজার আমার বড় ভাইয়ের বাসাতে উঠবো। জিহাদ বলেছে তিন দিন ঢাকায় থাকবে, এরপর বিজয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে বাড়ি ফিরবে।
এই প্রসঙ্গে জিহাদ বলে, আমার এই অনুষ্ঠানগুলো খুব ভালো লাগে। গানগুলো আমার খুব পছন্দ। আমি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখবো, তারপর বাড়ি যাবো।
শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা ফয়েজ আহমেদ (৪৫) বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এই প্রজন্ম রসাতলে গেছে এমন যে কথা ওঠে তা পুরোপুরি ঠিক না। জিহাদের মতো এসব বালকেরাই একসময় দেশের সংস্কৃতি আগলে রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এসটি/এসএনএস