মিরপুর থেকে: 'খালা, এই পাতাকা কেন লাগাইছেন দোকানে?' আকস্মিকভাবে এক পথচারীর এমন প্রশ্নে- ভীত আর বিনয়ী কণ্ঠে দোকানি খালার উত্তর- 'ক্যান, বাবা ভুল হইছে! শুনছি আজ বিজয় দিবস তাই লাগাইছি। '
অবশ্য কিসের বিজয়, কার বিজয় এসব ইতিহাস জানেন না পান-বিড়ি সিগারেটের দোকানি খালা তসলিমা আক্তার (৩৮)।
তসলিমা বলেন, 'আমি তো ওতো কিছু বুঝিনা। একাত্তুর না, কত সালে যেন এই দ্যাশে গণ্ডগোল হইছিলো। দাদা, অবশ্য সব জানে। দাদার কাছে মাঝে-মাঝে শুনতাম। '
তসলিমা দোকান করেন ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বর এর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে রাস্তার মোড়ে। একবেলা দোকান করেন আরেক বেলা কাজ করেন অন্যের বাসায়। স্বামী ইসমাইল হোসেন আর তিনি দু'জনে মিলে চালান এই ছোট্ট দোকান। যার আয় দিয়ে এই নগরীতে ১০ বছর বয়সী স্কুলগামী ছেলে রাকিব আর তাদের চলে প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াই।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের সকালে তাসলিমার দোকানের পান চিবুতে-চিবুতে গল্পের ছলে এসব জানা যায়। দোকানের পাশে বসেই আয়েশি ঠংয়ে বিড়ি ফুকাচ্ছিলেন ইসমাইল।
রাস্তার পাশে বস্তা বিছিয়ে সকাল ৮ার দিকে দোকান বসান তারা। আবার রাত ৮টার দিকে দোকান গোটান। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি হয়। আর এক বাসায় কাজ করে তাসলিমা যে টাকা পান, তাই দিয়ে চলে ইসমাইল-তসলিমা দম্পতির টানাপোড়েন সংসার।
ইসমাইলের বাড়ি নাটোর আর তসলিমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। বিয়ে পর থেকে প্রায় এক যুগ ধরে তারা ঢাকায় বসবাস করনে। বর্তমানে তারে মিরপুর-১১ তে ভাড়া বাসায় থাকেন।
বিজয় আসে, বিজয় যায়। সে বিজয়ের রেশ নিরবে-নিভৃতে তসলিমাদের দোকান ছুঁয়ে যায়। তবে জীবনের বিজয় অনুসন্ধানে তাদের কেটে যায় দিন-মাস-বছর...
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
টিআই