ঢাকা: শক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসের পড়ন্ত বিকেলে রাজধানীর হাতিরঝিলে জড়ো হওয়া হাজার-হাজার দর্শনার্থীকে অনাবিল আনন্দে ভাসিয়েছে মনোমুগ্ধকর নৌকাবাইচ। বিজয় দিবসে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য এই নৌকাবাইচের আয়োজন করে বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশন।
ফেডারেশনের সভাপতি মোল্লা মোহম্মদ আবু কাওছার বিকেল ৩টায় নৌকাবাইচের উদ্বোধন করেন। বিকেল পৌনে ৫টায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেণ সিকদার।
৪৬তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ নৌকাবাইচের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ ‘নোমান গ্রুপ’। গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল্লাহ মোহম্মদ জাবের উপস্থিত থেকে নৌকাবাইচ উপভোগ করেন এবং আগামীতে এ ধরনের আয়োজনের সঙ্গে থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
নৌকাবাইচে পুরুষ বিভাগে অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে বান্দরবান জেলা। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নারায়ণগঞ্জ এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করে সিলেট।
মহিলা বিভাগে অংশ নিয়ে প্রথম হয় করুণা বিশ্বাসের দল, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আজমেরি খাতুন এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করে টঙ্গী রোয়িং ক্লাব। এছাড়া কুড়িগ্রাম, ঝালকাঠি ও নড়াইল এই তিনটি জেলা দল নৌকাবাইচে অংশ নেয়।
মহিলা বিভাগে অংশ নেয় মোট ৪টি দল। ১০ দলের এই নৌকাবাইচে পুরস্কার জেতে ৬টি দল। বিজয়ীদের মধ্যে ট্রপি ও ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে বীরেণ সিকদার বলেন, ক্রীড়া বিশ্বে বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে থাকা দেশ নয়। বিভিন্ন ইভেন্টে বাংলাদেশকে এখন সারা বিশ্ব সমীহ করে, সম্মান দেয়। অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বৈশ্বয়িক দিক থেকে নানা সূচকে বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনইভাবে বাংলাদেশের ক্রীড়াও এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই এগিয়ে যাওয়ার পথে সরকার যেমন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের করপোরেট জগতকেও ক্রীড়া উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। আর এ কাজে যারা এগিয়ে আসবে। তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা ট্যাক্স ফ্রি ব্যবস্থা করে দেবো।
রোইং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, নৌকাবাইচ হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। এটিকে শহরের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য আমাদের এই আয়োজন। এ আয়োজন থেকে যে আনন্দটুকু পাওয়া গেল, তা আমরা দর্শকদের জন্য উৎসর্গ করলাম।
বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশের এখন এগিয়ে যাওয়ার পালা। তারই নিদর্শন হিসেবে একটা নোংরা, পচা নর্দমা আজ মনোমুগ্ধকর হাতিরঝিলে পরিণত হয়েছে। আজ সেখানে হাজার-হাজার দর্শক গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ শহরে বসে উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। আগামীতে আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখবো।
এদিকে, মহান বিজয় দিবসে ছুটির অবসরে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে যারা হাতিঝিলে ঘুরতে এসেছিলেন। তারা প্রাণ ভরে উপভোগ করেছেন নৌকাবাইচ।
হাতিরঝিলের দুই ধারে ও ভিউ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে নৌকাবাইচে অংশ নেওয়া দলগুলোকে হৈ-হুল্লোড়, করোতালি ও চেচা-মেচির মাধ্যমে উৎসাহ যুগিয়েছেন তারা। লাল, সবুজ, হলুদ, আকাশি রংয়ের সার্জি ও হাফপ্যান্ট পড়া তরুণ-তরুণীরা হাতিরঝিলের স্বচ্ছ জলে নৌকা বেয়ে আনন্দ বিলিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
এজেড/টিআই