ময়মনসিংহ: রোগ নির্ণয়ের ক্যামিক্যালের নাম রিএজেন্ট। হার্ট অ্যাটাক হলে শনাক্ত করা যায় এ রিএজেন্টের মাধ্যমে।
ময়মনসিংহ র্যাব-১৪’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অবশেষে বেরিয়ে এলো এ দু’ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের নৈমিত্তিক এ অভিনব প্রতারণা।
প্রতিনিয়তই তাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। দিনের পর দিন এমন প্রতারণা করে প্রতিনিয়তই কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল তারা।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ নগরীর চরপাড়া মোড় এলাকার ল্যাবএইড হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেফওয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রান্ত প্রাইভেট হাসপাতাল, পিউর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দু’টি ফার্মেসিকে বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে মোট ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
র্যাব সদর দফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সারওয়ার আলম এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ র্যাব-১৪’র মেজর জাহাঙ্গীর আলম।
সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. মো. শাহজাহান ও ময়মনসিংহ ড্রাগ সুপার গুলশান জাহান।
জানা যায়, ময়মনসিংহের নামের পাশে জুটেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নগরীর তকমা। নগরীর চরপাড়া, ব্রাক্ষপল্লী, ভাটিকাশর ও বাঘমারা এলাকায় গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেশিরভাগ ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই স্থায়ী চিকিৎসক, দক্ষ টেকনেশিয়ান, নার্স, আয়া বা অন্যান্য স্টাফ।
এসব নামসর্বস্ব ও নিম্নমানের স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে চলে অপচিকিৎসাও। এসব প্রতিষ্ঠানে সুচিকিৎসার দেখা যেমন মেলে না, তেমনি পিয়ন বা ওটি বয় থেকে কিনিক মালিক হয়ে উঠার চাঞ্চল্যকর তথ্যও রয়েছে।
দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা ও নজরদারির অভাবে ইতিহাস-ঐতিহ্যের এ প্রাচীন নগরীতে অপচিকিৎসার ডালপালা বিস্তার করে।
অবশেষে জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে ক্লিনিকপাড়ায় হানা দেয় র্যাব-১৪। রক্ত, হরমোন টেস্টের মেশিনে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ল্যাবএইড হাসপাতালকে ৬ লাখ টাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ কেমিকেল রিএজেন্ট, কিনিক্যাল বর্জ্য ল্যাবের ভেতরে থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১০ লাখ টাকা, আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ রাখা, ফার্মাসিস্ট না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগে পপুলার ফার্মেসিকে ৭৫ হাজার টাকা, পাশের পিপলস ফার্মেসিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া ল্যাবরেটরী না থাকা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে পিউর ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২ লাখ টাকা, রিএজেন্ট ফ্রিজে না রেখে বাইরে রাখা এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে সেফওয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১ লাখ টাকা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ দু’টি রিএজেন্ট পাওয়ার অভিযোগে প্রান্ত প্রাইভেট হাসপাতালকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযান পরিচালনার সময় প্রতারণার কৌশলে রীতিমতো আঁতকে ওঠে ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাব সদর দপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সারওয়ার আলম বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরের জুলাই মাসে যে রিএজেন্ট মেয়াদোউত্তীর্ণ হয়ে গেছে সেটির গায়ে ওভার রাইটিং করে ২০১৮ সাল লেখা হয়েছে। ক্লিনিকপাড়ায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, এ অভিযান পরিচালনার সময়েই ‘মানি না মানবো না’ শ্লোগান দিয়ে নগরীর চরপাড়া মোড় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্লিনিক মালিক, কর্মচারীরা। এ সময় পরিস্থিতি চরম আকার নিলে র্যাব লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় র্যাব স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবা কিনিকের কর্মচারী আরমানসহ দু’জনকে আটক করে।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০ ২০১৬
এমএএএম/বিএস