ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শুকনো মৌসুমেও পানির নিচে রাজপথ!

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
শুকনো মৌসুমেও পানির নিচে রাজপথ! ছবি: কাশেম হারুন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্রায় ৬ বছর পার হয়ে গেলেও শেষ হয়নি মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। বছরের পর বছর ধরে রাজধানীবাসী ভুগছেন খানা-খন্দে ভরা রাস্তার ধুলো, জল-কাদা আর যানজটের দুর্ভোগে।

ঢাকা: প্রায় ৬ বছর পার হয়ে গেলেও শেষ হয়নি মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। বছরের পর বছর ধরে রাজধানীবাসী ভুগছেন খানা-খন্দে ভরা রাস্তার ধুলো, জল-কাদা আর যানজটের দুর্ভোগে।



নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের বিভিন্ন অংশের রাস্তা কোথাও পানির নিচে, কোনো কোনো অংশ কাদায় ভরা। যে জায়গাগুলোতে পানি-কাদা নেই, সেখানে রয়েছে ‍রাশি রাশি ধুলো। বাস, রিকশা কিংবা অন্য যানবাহনে চলার সময় রাস্তা জুড়ে ছোট-বড় খানাখন্দে ঝাঁকুনি হজম করতে হয়।
 
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সরেজমিনে হাতিরঝিল থেকে কারওয়ানবাজারমুখী সড়ক, বাংলামোটর-ইস্কাটন থেকে মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, শান্তিনগর এবং রামপুরার নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে।
 
ফ্লাইওভারের রাজারবাগ থেকে মালিবাগ মোড় অংশের রাস্তা জলাবদ্ধই থাকছে সব সময়। স্যুয়ারেজের পানিতে স্রোত বইছে, ঢেউ খেলছে। মূল সড়ক সংযুক্ত পার্শ্ববর্তী গলির রাস্তাতেও ছাপিয়ে গেছে ময়লা পানি।
 
খানা-খন্দে ভরা এ রাস্তায় ঝুঁকি নিয়েই যান চলাচল করছে। ইঞ্জিনে পানি লেগে বিকল হচ্ছে সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটেরও। রিকশাগুলো অনুমানেই গর্ত এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
 প্রায় ৬ বছরেও শেষ হয়নি মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ, মানুষের ভোগান্তি
ফুটপাতগুলোরও কোনো কোনো অংশ পানির নিচে। যে জায়গাগুলো একটু জেগে আছে, সেগুলোও রাস্তায় গাড়ি চলার সময় ঢেউ এসে ডুবিয়ে দিচ্ছে।
 
শান্তিনগর থেকে মালিবাগ মোড়ে আসার রাস্তায়ও জমে আছে পানি।
 
রামপুরা থেকে মালিবাগ-মৌচাক হয়ে রাজারবাগ-শান্তিনগর, বাংলামোটরের ইস্কাটন থেকে মগবাজার মোড় হয়ে মৌচাক এবং হাতিরঝিল মোড় থেকে কারওয়ানবাজারের দিকে এফডিসি গেট হয়ে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত অন্য এলাকাগুলোতেই একই দুর্ভোগের চিত্র।
 
এদিকে নির্ধারিত সময়ে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ না করে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফায়। সেই সঙ্গে বেড়েছে খরচ, বেড়েছে দুর্ভোগ।
 
মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভারটির কাজ হচ্ছে তিন ভাগে। সাতরাস্তা থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলেও এ অংশের সঙ্গে সংযুক্ত এফডিসি গেট হয়ে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত কাজ এখনও চলছে। ইস্কাটন থেকে মৌচাক এবং রামপুরা থেকে মালিবাগ-মৌচাক হয়ে রাজারবাগ-শান্তিনগরের কাজ শেষ হতেও আরও অনেক সময় লাগবে।
 
২০১১ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে ২০১৪ সালের মধ্যে ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করার কথা ছিল। এরপর সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হলেও কাজ শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এখন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত।
 
রাজারবাগের বাসিন্দা রিপন শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘জানি না, আর কতোদিন আমাদের এই ময়লা-কাদা পানি, ধুলোবালি ভরা ভাঙ্গাচোরা রাস্তার সঙ্গে বসবাস করতে হবে?’
 প্রায় ৬ বছরেও শেষ হয়নি মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ, মানুষের ভোগান্তি
তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভারের কাজের পাশাপাশি রাস্তাগুলো ঠিক করে রাখতে পারতো কর্তৃপক্ষ। শীতকালেই এই অবস্থা, তাহলে বর্ষার সময় আমাদের কতো কষ্ট করতে হয়!’
 
আবুল কাশেম বলেন, ‘কষ্ট হয় জনগণের, তাদের কী! তারা ইচ্ছা করলে কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারে। রাস্তাটা একটু মেরামত করে রাখতে পারে, কিন্তু কিছুই করে না’।
 
আরও দেরি না করে ফ্লাইওভারের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান তিনি।
 
রাজারবাগ-মালিবাগ-মৌচাক-মগবাজার রুটের বলাকা বাসের যাত্রী সাফিয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ধুলো-বালিতে নিঃশ্বাস নিতে পারি না। আর যেভাবে ঝাঁকুনি দেয়, মনে হয় নাড়ি-ভুঁড়ি-কলিজা এক হয়ে যাবে, কোমরের হাড় ভেঙে যাবে’।
 
আরেক যাত্রী আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ রাস্তায় যখন বাস ঢোকে, আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকি, কখন এ এলাকা পার হবো’।
 
তিনি বলেন, ‘পানিতে রাস্তা দেখা যায় না। চাকা গর্তে পড়ে কাত হয়ে গেলে বাসের ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় অটোরিকশা, বাসের ইঞ্জিনে পানি লেগে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ রুটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়’।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এমইউএম/এমআইএস/পিসি/এএসআর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।