ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিটিং সার্ভিসে চিটিংবাজি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
সিটিং সার্ভিসে চিটিংবাজি সিটিং সার্ভিসের গাড়ি/ছবি: শাকিল

ঢাকা: রাজধানীর গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিসের নামে চিটিংবাজি নতুন নয়। যাত্রীরা সিটিং সার্ভিস না বলে চিটিং সার্ভিস বলতেই যেন বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য, স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো, ঠেসে-গেঁদে দাঁড়ানোর জায়গাটিও বোঝাই করা এদের কাছে নতুন নয়। তবে গাড়ির ছাল-চামড়া ওঠানো থাকলেও ‘সিটিং সার্ভিস’ লেখাটি থাকে জ্বলজ্বলে!

রাজধানীর অধিকাংশ রুটে গণপরিবহনগুলো নিজেদের সিটিং সার্ভিস দাবি করে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের চিটিংবাজি ব্যবসা।

হাফ পাস নেই, কম স্টপেজ, সিটিং সার্ভিস লিখে যে যার ইচ্ছামতো বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।

লেখার সঙ্গে কোনো মিল নেই সার্ভিসের। এর নিয়ন্ত্রণ নেই কারও হাতে, নেই জবাবদিহিতাও। সব মিলিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কাছে অসহায় যাত্রীরা।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর শ্যামলী, আসাদগেট, সায়েন্সল্যাব মোড় ও শেরেবাংলা রোডসহ বিভিন্ন রুটের গাড়িগুলোতে চড়লে দেখা যায় প্রতারণার ফাঁদ পাতা এসব সিটিং নামের লোকাল চিটিং গাড়িগুলোর নৈরাজ্য।

রাজধানীর মোহাম্মাদপুর থেকে মিরপুর-১০, ২, ১ নম্বর হয়ে আনসারক্যাম্প যায় প্রজাপতি এবং মোহাম্মদপুর থেকে আবদুল্লাহপুর যায় তেতুলিয়া পরিবহন। এদিকে সাভার থেকে আজিমপুর যায় গ্রামীণ সেবা, যেগুলোর সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা। আবার যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী ও সাভার পর্যন্ত চলে লাব্বাইক পরিবহন, সাইয়েল্যাব শাহবাগ মালিবাগ চলে তরঙ্গ প্লাস- তাদের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু এসব বাসে যাত্রীদের টিকিট দেওয়া হয় না।

সিটিং সার্ভিসের গাড়ি/ছবি: শাকিলসরেজমিন দেখা যায়, সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হলেও যাত্রীসেবার মানও আগের চেয়ে কমেছে। বেশিরভাগ সিটিং সার্ভিস বাসে ফ্যানের কোনো ব্যবস্থা তো নেই, এমনকি সিটগুলোও ভাঙা, ঠিক নেই গ্লাস। যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী তোলা হয়, অপরিচ্ছন্ন আসন, আর ছারপোকা তো নিত্যদিনের সঙ্গী। লক্কড়-ঝক্কড় এসব বাসে ইঞ্জিনের ওপরও বসানো হচ্ছে যাত্রীদের।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে ১৭টির বেশি নতুন বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে পুরনো বাস সার্ভিসগুলোও সিটিং সার্ভিসের এক প্রতিযোগিতায় মেতেছে।

প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার হওয়া চাকরিজীবী আব্দুস সামাদ (৪৩) বাংলানিউজকে বলেন, আসলে লোকাল-সিটিং বলতে কিছু নেই। সবারই ভাড়া বেশি নেওয়ার ধান্ধা। টাকা দিতে আপত্তি নেই, যদি সেবাটা পাওয়া যেত। আমরা নিরুপায়, তাই বাসে উঠতে হয়।

অন্যদিকে ৩৭ আসনের স্থলে ৪১ আসনবিশিষ্ট বাসে যাত্রীরা আরাম করে বসতে পারে না। অতিরিক্ত আসনের কারণে বেশিরভাগ বাসে উঠতে-নামতে সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের। এছাড়া নারী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা হয়নি, ফলে নারী যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তারপরও দ্বিগুণ টাকা গুনতে হয় শুধু সিটিং সার্ভিসের নামে।

সিটিং সার্ভিসের গাড়ি/ছবি: শাকিলপ্রজাপতি গাড়ির চালক মো শাকিল (৩৫) বাংলানিউজকে জানান, গাড়ি মালিক গাড়ি মেরামত না করলে আমরা কি করতে পারি। সিটিং সার্ভিসই চালানো হয়, তবে মাঝে মধ্যে যাত্রীর চাপ থাকলে লোকাল যাত্রীও নেই।

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, সিটিং সার্ভিস চালানোর কোনো বৈধতা কারও নেই। বিআরটিএ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে, সেটাই নায্য ভাড়া। এর বাইরে সব প্রতারণার ফাঁদ, এদের চিহ্নিত করে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
এসটি/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।