ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্টিকার লাগিয়ে লোকাল সার্ভিসের ‘সিটিং সার্ভিস’ বনে যাওয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
স্টিকার লাগিয়ে লোকাল সার্ভিসের ‘সিটিং সার্ভিস’ বনে যাওয়া রাজধানীর সড়কে সিটিং সার্ভিসের নামে ভোগান্তি

ঢাকা: রাজধানীর সড়কে যারা নিয়মিত চলাচল করেন তাদের কাছে বেশকিছু লোকাল বাস সার্ভিস বেশ পরিচিত। প্রতি স্টপেজে থামানো, বাসে উপচেপড়া মানুষের ভিড় লোকাল সার্ভিসের এমন দৃশ্যের কথা মনে হলেই নাভিশ্বাস ওঠে। তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে এসব বাসেই চড়তে বাধ্য হন নগরবাসী।

কিন্তু সম্প্রতি রাজধানীর বেশিরভাগ লোকাল সার্ভিসেই শোভা পাচ্ছে ‘সিটিং সার্ভিস’ স্টিকার। সিটিং তকমা লাগিয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করলেও সেবার মানে কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

বরং সিটিংয়ের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করে প্রতিনিয়তই কাটা হচ্ছে যাত্রীদের পকেট। এ নিয়ে বাসের কন্ডাকটরের সঙ্গে যাত্রীদের বাকবিতণ্ডার চিত্রও এখন স্বাভাবিক।

রাজধানীর আজিমপুর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২৭ নং লোকাল বাসে এখন ভিআইপি স্টিকার লাগানো হয়েছে। সামনে পেছনে লেখা রয়েছে কাউন্টার সার্ভিস।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) সার্ভিসটির কলাবাগান কাউন্টারের খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থামানোর ইশারা করতেই ভেতর থেকে কন্ডাকটরের প্রশ্ন কই যাবেন? বনানী যাওয়ার কথা শুনে তিনি বলেন, ৩০ টাকা ভাড়া। এই ভাড়াতেই রাজি হয়ে বাসে ওঠার পর গন্তব্যের পথে আরো কয়েকবার গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো হলো।

কারণ জানতে চাইলে কন্ডাকটর মামুন বলেন, সিট খালি আছে তাই দু’একজন যাত্রী নেই। দাঁড়িয়ে একজনও যাবে না।

কিন্তু এটা কাউন্টার সার্ভিস প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, বুঝেনইতো মামা, আমাদেরও চলতে হইবো।

সাধারণত কলাবাগান থেকে বনানী পর্যন্ত এ বাসে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা ভাড়া হলেও ভিআইপি তকমা লাগানোর পর তা দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকায়।

একই বাসের যাত্রী দীপন বলেন, একটু স্বস্তির আশায় এ বাসে উঠি। ভাড়া দ্বিগুণ আবার কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি। তারপরেও মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে লোক নেওয়া, যেখানে-সেখানে থামানো তো আছেই। সবকিছুই তাদের ইচ্ছামতো, আমরা তাদের কাছে জিম্মি।

বাড়তি ভাড়ার ব্যাপারে মামুন জানান, সমিতি থেকে যে ভাড়া নির্ধারিত করে দিয়েছে তারা সেই অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছেন।  

বনানী থেকে এবার শাহবাগ যাওয়ার পালা। আব্দুল্লাহপুর থেকে গুলিস্তানগামী ৩নং বাসে লাগানো হয়েছে 'স্পেশাল সার্ভিস' ও 'কম স্টপেজ' স্টিকার। বদলে যাওয়া সিটিং সার্ভিসে উঠে প্রথমেই সিট পাওয়া যায়নি।

মহাখালী পার হওয়ার পর বসা গেলেও কিছুক্ষণ পর শাহবাগ পর্যন্ত ১০ টাকার ভাড়া গুণতে হলো ২০ টাকা। এমন কোনো স্টপেজ ছিলো না যেখানে থামেনি ‘কম স্টপেজ’ সার্ভিস।  

ওই বাসের যাত্রী সাইফুল কবীর বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ করেই এসব লোকাল সার্ভিসে সিটিং তকমা লাগানো হয়েছে। কিছু গাড়ির উপরে রং করা হলেও অনেক গাড়ি অবিকল আগের মতোই। গাড়ির ভেতরের সিট আর সেবার মান কিছুই বদলায়নি। পার্থক্য হচ্ছে, আগে একেবারে চাপিয়ে চাপিয়ে যাত্রী উঠাতো আর এখন সেই চাপানোটা নেই। তবে প্রায় সবসময় দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেওয়া হয়। মাঝখান থেকে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিতে হয় আমাদের।

এছাড়া, সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটে লোকাল বাস খ্যাত বলাকা সার্ভিসও হঠাৎ করেই নামেমাত্র সিটিং সার্ভিসে পরিণত হতে দেখা গেছে।

বিআরটিএ'র তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর রুটে সিটিং ও লোকাল সার্ভিস বলে আলাদা কোনো ভাড়ার তালিকা নেই। সব বাসেই সমান ভাড়া, অথচ সিটিং বাসের দৌরাত্ম্যের মধ্যে লোকাল সার্ভিস খ্যাত বাসগুলোর সিটিং বনে যাওয়ায় প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ আশা করেন ক্ষতির সম্মুখীন যাত্রীরা।

বাংলাদেশ সময়:১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।