দক্ষতা বৃদ্ধি, সচেতনতা ও আচরণগত পরিবর্তনের এই প্রশিক্ষণ বাংলাদেশে প্রথম এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ৩২৫ জন চালক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকমানের এ প্রশিক্ষণ চলছে রাজধানীর উত্তরার ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলে। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এই প্রশিক্ষণের সব খরচ বহন করছেন। প্রায় ২০ লাখ টাকা এতে ব্যয় হচ্ছে।
পরিবহনের খাতের এ শীর্ষ নেতা দেশের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শ্রম দিচ্ছেন। বাংলাদেশের চালকদের মধ্যে এ ধরনের প্রশিক্ষণে তিনি এরই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
উত্তরার এই চালক প্রশিক্ষণ সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, ভিডিও দেখিয়ে দুর্ঘটনার উদাহরণ বার বার দেখানো হচ্ছে। এতে চালকরা বুঝতে পারছে ঠিক কি কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটলো।
ব্র্যাকের প্রশিক্ষকরা জানান, আগে এসব চালক বুঝতেন না কোন জায়গাগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আরেকজন চালক শাহ আলমও প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে গাড়ি চালান। তার ভাষায়, ‘আগে জানতাম না, রাস্তার পাশে থাকা কোন সিগন্যালে কি বলা আছে। কোন সেতুতে ওঠার আগে সতর্কতা চিহ্ন দেখতে পেতাম, পরে সেতুর ওপর ওভারট্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন সব চিহ্ন চিনি। এরকম চিহ্ন দেয়া থাকলে ওভারট্রেক করবো না। ’
একেকটি ক্লাসে ৩০ জনের ব্যাচ করে আবাসিক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ৩ দিন করে একটি ব্যাচের ক্লাস হচ্ছে।
সড়ক নিরাপত্তার প্রশিক্ষক মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন,, দুর্ঘটনার ভিডিও তুলে ধরে চালকের কি সতর্কতা প্রয়োজন ছিলো তা বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। হাতে কলমে এবং ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে সবকিছু শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারপর চালকরা তাদের ভুল বুঝতে পারছেন।
প্রশিক্ষক মতিউর আরো জানান, সড়ক নিরাপত্তা ও ‘গাড়ি মেইনটেন্যান্স শেখানো হচ্ছে। শেখানো হচ্ছে ‘ডিফেনসিভ ড্রাইভিং’ বিষয়ে। অর্থাৎ অন্যরা ভুল করবে, কিন্তু নিজেকে সে ভুল থেকে দূরে রাখতে হবে।
মতিউর রহমান আরও বুঝিয়ে বলেন, ‘অনেক সময় চালকদের যখন নিয়োগ দেয়া হয় তখন জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কতটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে থাকে, যে যত দুর্ঘটনা ঘটায় তার তত অভিজ্ঞতা। দুর্ঘটনা হয় আপনাকে ঘটিয়ে শিখতে হবে অথবা দেখে শিখতে হবে। ঘটিয়ে শেখাটি কাম্য নয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এরকম দেখে শিখতে হবে যে, বাস্তবে আমার কি করতে হতে পারে।
ব্র্যাকের এই প্রশিক্ষণ দুর্ঘটনা কমানোর পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কমিয়ে দিয়েছে। আগে যেখানে ১৫০ লিটার তেল লাগতো, এখান সেখানে ১৩০ লিটার তেল লাগে।
এ প্রশিক্ষণের সফলতা এরই মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আগে ঢাকা ময়মনসিংহ রোডে যেখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতো, এখন কিন্তু ঘটছে না। সময় লাগবে। কিন্তু এই প্রশিক্ষণের ফলে দুর্ঘটনা হার অনেক কমে যাবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৩ সালের তথ্যানুযায়ী, শুধু ২৩ শতাংশ দুর্ঘটনা হয় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বাস চালকদের সংশ্লিষ্টতার কারণে। এছাড়া বাস, ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের চালকরা ৪৭ শতাংশ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন। এ প্রেক্ষাপটেই প্রশিক্ষণের আয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৭
এসএ/জেডএম