মারুফের ছোট ভাই রিফাত জামান বাংলানিউজকে বলেন, ৪ ডিসেম্বর তার মেয়ে সামিহাকে বিমানবন্দর থেকে এগিয়ে আনতে সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বাসা থেকে গাড়ি চালিয়ে বের হন। তার কিছুক্ষণ পর ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ বাসার ল্যান্ড ফোনে অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে মারুফ পরিচয়ে গৃহপরিচারিকাকে বলেন, তার কম্পিউটার ঠিক করতে হবে।
কেউ বাসায় আসলে যেন তার কম্পিউটার দিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর ৮টা ৫ মিনিটের দিকে তিন জন লোক বাসায় এসে তার ল্যাপটপ, কম্পিউটারের সিপিইউ, ২টি ক্যামেরা ও একটি স্মার্টফোন নিয়ে যায়। সে সময় মারুফের ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহিল কাফি বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার কিছু আগে তার বাসার ল্যান্ড ফোনে দু’টি সন্দেহজনক কল আসে। একটি কলে কোনো নম্বর শো করেনি শুধু ‘পি’ লেখা ছিল। আরেকটি কলে বেশ কিছু সংখ্যা ব্যবহৃত হলেও এটা কোনো ফোন নম্বর ছিল না। ফলে কলগুলোর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
‘তবে তার কল লিস্টের পূর্ণ সিডিআর হাতে পেলে কোনো কোনো নম্বরের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল সে বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া যাবে। ’
তিনি আরও বলেন, বাসার সামনের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- ক্যাপ পরিহিত তিনজন বাসায় প্রবেশ করেন এবং ল্যাপটপ-সিপিইউ নিয়ে বের হয়ে যান। একজনের মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক পরা ছিল। তিনজনই বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী এবং বেশ স্মার্ট। তবে তারা কেউ ক্যামেরার দিকে তাকাননি। ফলে চেহারা স্পষ্ট বুঝা যায়নি।
আব্দুল্লাহিল কাফি আরও বলেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামানের ব্যবহৃত গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-গ-২১-১৩৯৯) মঙ্গলবার ৩০০ ফিট রাস্তা থেকে খিলক্ষেত থানা পুলিশ উদ্ধার করেছে। গাড়ির ভেতরে হোমমেইড তিনটি সেন্ডউইচ পাওয়া গেছে। মারুফ জামানের ফোন নম্বরটির অবস্থান সর্বশেষ কাওলা এলাকায় ছিল, পরে তার নম্বরের আর কোনো সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামানকে খুঁজে পেতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। তদন্ত চলছে, এখনই কোনো ধারণা করা ঠিক হবে না।
এদিকে বুধবার ধানমন্ডিতে মারুফের বাসায় যায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি দক্ষিণ) একটি দল। বাসা থেকে বের হয়ে ডিবির ধানমন্ডি জোনাল টিমের সহকারী কমিশনার (এসি) ফজলুর রহমান বলেন, আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে তদন্তের জন্য যেসব তথ্য প্রয়োজন সেসব বিষয়ে আমরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। মারুফ জামানের অবস্থান জানতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, মারুফ জামান কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। বিভিন্ন সময় টেলিভিশনে টকশোতে অতিথি হিসেবে অংশ নিতেন। এছাড়া মারুফ জামান সর্বশেষ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। এর আগে তিনি কাতারের রাষ্ট্রদূত এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সেলর হিসেবেও কাজ করেছেন।
তিনি ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীতে সিগন্যাল কোরের ‘ষষ্ঠ কোর্স’ ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন এবং ২০১৩ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে অবসরে যান।
উল্লেখ্য, সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিদেশ ফেরত মেয়ে সামিহাকে আনতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হন মারুফ জামান। তবে তিনি বিমানবন্দরে যাননি এবং এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে মঙ্গলবার (০৫ ডিসেম্বর) ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-২১৩) করেন তার পরিবার।
** সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান নিখোঁজ
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭
পিএম/এসজে/আরএ