ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর পুলিশের তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টিমের ফাঁদে ধরা পড়ে তারা। এরপরই বেরিয়ে আসে এ হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক সব তথ্য।
পুলিশের এই সংস্থাটি মামলার তদন্ত কাজ গুছিয়ে এনেছে। শিগগিরই আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করবে। তবে এর আগে আরও চমক রয়েছে। তদন্ত স্বার্থে এখন তা বলতে না চাইলেও যেকোন সময় তা জানানো হবে বলে আভাস দিয়েছে তদন্ত সংস্থাটি।
এই ছিল গত বছরের ২২ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর অভিজাত হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে ঘটে যাওয়া জোড়াখুন মামলার সর্বশেষ হাল-হকিকত।
গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিজানুর রহমানকে। আর তার প্রেমিকা সুমাইয়া নাসরিনকে হত্যা করা হয় ধর্ষণের পর বালিশ চাপা দিয়ে। আর প্রেমঘটিত কারণেই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া চার তরুণ মিলে সুপরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটায়। গ্রেফতারের পর বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মামলার তদন্তকাজ প্রায় শেষদিকে। শিগগিরই তারা আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন। তবে এ ঘটনার নেপথ্যে আরও অনেক না জানা রহস্য রয়েছে। আরও সন্দেহভাজন রয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখনই তা বলা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে পিবিআইয়ের এই তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও এক সন্দেভাজন রয়েছে।
এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। তদন্ত করে আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছিল, সুমাইয়াকে খুন করে মিজানুর আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু মরদেহ উদ্ধারের সময় মিজানুরের দুই হাত পেছন দিকে বাঁধা ছিল। তদন্তে এই ত্রুটির কথা উল্লেখ করে আদালত পিবিআইয়ের কাছে মামলাটি পাঠায়। পরে পিবিআই তদন্ত শুরু করলে বেরিয়ে আসে মূল রহস্য। দেড় বছর পর ধরা পড়ে এই ঘটনায় জড়িত চার তরুণ। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি ‘ক্লুলেস’ হত্যাকাণ্ড ছিল।
চারজনকে গ্রেফতারের পর তারা জানায়, সনি টিভির ‘ক্রাইম পেট্রোল’ সিরিয়াল দেখে তারা খুনের পর স্বাভাবিক থাকার কৌশল রপ্ত করে। এতে তারা প্রথম দিকে সফলও হয়। খুনের পর দেড় বছর ধরে এলাকাতেই অবস্থান করে বিভিন্ন কৌশলে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে সক্ষম হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
গত বছরের ২২ এপ্রিল হোটেল নাইসের ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে ওই তরুণ-তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে নিহত মিজানুরের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। তার বাবা উমেদ আলী একজন কৃষক। আর সুমাইয়ার পরিবার থাকেন বগুড়ায়। তারা বাবা আবদুল করিম পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই)। ঘটনার পর তিনি বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন।
গ্রেফতারকৃত চারজন হলেন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাহাত মাহমুদ (২১), রাজশাহী কলেজের প্রাণিবিদ্যার চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বোরহান কবীর ওরফে উৎস (২২), একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আল-আমিন (২০) ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ভর্তি প্রার্থী আহসান হাবিব ওরফে রনি (২০)। এদের মধ্যে আহসান হাবিব ও বোরহান এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা ১৮ অক্টোবর আহসান হাবিবকে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন রাজশাহীর দুটি ছাত্রাবাস থেকে বাকি তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭
এসএস/আরআর