১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’র মাধ্যমে পাকিস্তানি বর্বরবাহিনী গণহত্যা শুরুর পর মুক্তিযোদ্ধারা তৎকালীন পুলিশ সুপার ফখরুল ইসলামের কাছ থেকে চাবি নিয়ে বরিশাল পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার ভেঙ্গে গুলি, রাইফেল নিয়ে যায়।
২৬ মার্চ মেজর জলিলকে উজিরপুরের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়।
এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অর্ন্তভুক্তি ও ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণের ব্যবস্থা করা হতো ।
১৮ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদাররা আকাশ পথে বরিশালে প্রথমে হামলা চালায়। পরে ২৫ এপ্রিল জল, স্থল ও আকাশ পথে দ্বিতীয় দফা আক্রমণ হয়। হানাদার বাহিনী স্থল পথে বরিশাল আসার পথে গৌরনদীতে এবং নৌ পথে গানবোট যোগে প্রবেশের চেষ্টাকালে শহরতলী তালতলীর জুনাহারে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পরে।
কিন্তু উভয় স্থানে ভারী অস্ত্রের সামনে পিছু হটতে বাধ্য হয় মুক্তিযোদ্ধারা। আর হানাদারবাহিনী চালায় হত্যাযজ্ঞ।
পাকিস্তানি বাহিনী প্রথমে অশ্বিনী কুমার হলে অবস্থানের পর জিলা স্কুলে এবং সর্বশেষে ওয়াপদায় (বর্তমান আঞ্চলিক পানি উন্নয়ন বোর্ডের কম্পাউন্ড) তাদের হেড কোয়ার্টার গড়ে তোলে। এখানে বাংকার খুঁড়ে,ভারী অস্ত্রের সমাবেশ ঘটায় তারা। এখানেই তৈরি করা হয় নির্যাতন কক্ষ।
৯ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ জলিল ক্যাপ্টেন শাহজাহানকে বরিশাল সাব সেক্টরের দায়িত্ব দিয়ে বরিশাল পাঠান। এ সময় তার নতুন নামকরণ করা হয় ক্যাপ্টেন ওমর। উজিরপুরের বরাকোঠা দরগাহবাড়ি প্রাইমারী স্কুলে তিনি প্রতিষ্টিত করেন বরিশাল সাব সেক্টর কমান্ডের হেড কোর্য়াটার।
নভেম্বর মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধারা থানাগুলোতে আক্রমণ চালাতে শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ সব যুদ্ধে বেশ কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হলেও পাকিস্তানি বাহিনী কার্যত থানাগুলোতে বন্দী হয়ে পড়ে।
৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ করে বরিশালে কারফিউ ঘোষণায় মানুষ আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কারফিউ ঘোষণা হলেও সেনাটহল ছিলো না। অথচ অন্যদিনগুলোতে সব সময়ের জন্য রাস্তায় সেনা, পুলিশ এবং রাজাকারদের টহল থাকত। সড়ক পথ চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় পাক হানাদাররা পালানোর পথ হিসেবে জল পথকে বেছে নেয়।
৮ ডিসেম্বর ভোররাতের মধ্যে তারা বরিশাল ত্যাগ করে। সে পথেও পাকিস্থানী বাহিনী ও তাদের দোষররা নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় মুলাদীর কদমতলা নদীতে লঞ্চ, চাঁদপুরের মেঘনা মোহনায় কিউ জাহাজসহ গানবোট ও কার্গো ধ্বংস হয়েছিল।
৮ ডিসেম্বর প্রথমে সুলতান মাষ্টার মুক্ত বরিশাল শহরে প্রবেশ করে কোতয়ালী থানা দখল করেন। এভাবে একে একে বরিশাল শহরের বিভিন্ন স্থাপনা দখলে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। এর পর উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। এদিকে পাকিস্তানি আর্মির পলায়নে জয় বাংলা ধ্বনিতে হাজার হাজার জনতা রাজপথে নেমে পড়ার মধ্যদিয়ে বরিশাল মুক্ত হলেও বরিশালের গৌরনদী পাকহানাদার মুক্ত হয় ২২ ডিসেম্বর।
মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বরিশাল মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, আলোচনা সভা ও র্যালি।
বাংলাদেশ সময় : ০৭৩৭ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭
এমএস/এমএইউ/