ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মানুষ সেদিন মুক্তির আনন্দে ফেটে পড়েছিল শহরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৭
মানুষ সেদিন মুক্তির আনন্দে ফেটে পড়েছিল শহরে মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার শেখ আনসার আলী।

মৌলভীবাজার: ৮ ডিসেম্বর সকালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ আমাদের মাথায় তুলে উল্লাস করছিল। মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয় আকাশ-বাতাস। এতো দীর্ঘ জয় বাংলার মিছিল আমি আর কোথাও দেখিনি। মানুষ সেদিন মুক্তির আনন্দে ফেটে পড়েছিল শহরে। কেঁদে কেঁদে কেউ এসে জিজ্ঞেস করছিলেন আমার ছেলে, ভাই, স্বামী, বন্ধু বেঁচে আছে কিনা? আমরা কোনো উত্তর দিতে পারিনি।

এভাবেই ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহর হানাদার মুক্ত হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ আনসার আলী। ১৯৭১ সালের এ দিনে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনেন মুক্তিযোদ্ধারা।

বিজয়ের সুভাষ নিয়ে যখন মৌলভীবাজার শহরমুখী যোদ্ধারা, তখনই পালিয়ে যেতে থাকে পাক হানাদার বাহিনী। মুক্ত হয় মৌলভীবাজার।

৭ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে পাক হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়, আমরা শহরে এসে কোর্টের (তৎকালীণ এসডিও অফিস) সামনে অবস্থান করলাম। সিদ্ধান্ত হলো সকালে মিছিল হবে, স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হবে। ১৯৬৮ সালের সংসদ সদস্য ছিলেন বর্তমান জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম তিনিই পতাকা উত্তোলন করবেন। সেদিন হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে পতাকা উত্তোলন করেন আজিজুর রহমান। মৌলভীবাজারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন কমরেড মানিক মিয়া, মির্জা আজিজ বেগসহ অনেকেই।  

৬ ডিসেম্বর উপজেলাগুলো থেকে পাক হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে ৭ ডিসেম্বর আমরা মৌলভীবাজার শহরের দিকে যাচ্ছিলাম। কুলাউড়া, শমশেরনগর, শ্রীমঙ্গল থেকে ৩টি গ্রুপ শহরের আশপাশে অবস্থান করলাম। তখনই আমাদের কাছে খবর এলো পাক হানাদার বাহিনী সিলেটের দিকে পালিয়া যাচ্ছে। আমরা তখন একটা টিম পাঠালাম শহরের দিকে। তারা শহরের চাঁদনীঘাট মনু ব্রিজে এসে ফায়ারিং করে পাক হানাদার বাহিনীর কোনো সাড়া পায়নি। অন্যান্য এলাকায় ‘জয় বাংলার’ আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী প্রাণ ভয়ে পালাচ্ছিল। সেদিন রাতেই আমরা কোনো যুদ্ধ ছাড়া শহর দখল করেছিলাম।

শেখ আসার আলী বলেন, শহরের আশপাশের গ্রামগুলোতে মানুষজন আড়ি পেতে ছিলেন কবে মুক্তিযোদ্ধারা আসবে আর পাক হানাদার বাহিনীকে শেষ করে দিবে। আমরা যখন মৌলভীবাজার মুক্ত ঘোষণা করি তখন সেসব মানুষ মাছির মত ভন ভন করে আসেন শহরে। নারী-পুরুষের ভেদাভেদ ভুলে মিছিল তুলেছিল ‘জয় বাংলা’।

তিনি আরো বলেন, তখন আজিজুর রহমানসহ অন্যান্যরা হাত উঁচিয়ে সাধারণ মানুষকে বলছিলেন- আপনারা শান্ত হোন, মাত্র মৌলভীবাজার মুক্ত করেছি আমরা, সারাদেশের অবস্থা বলা যাচ্ছে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যাতে পাক হানাদার বাহিনীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পারি। মানুষ ঘরে ফিরে গেলেন স্বস্তিভরা হাসি নিয়ে। মুক্ত হল মৌলভীবাজার।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।