নিখোঁজ হবার পাঁচ দিনেও কোনো হদিস না পেয়ে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূতের পরিবাবের সদস্য ও স্বজনরা।
গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিদেশ-ফেরত মেয়ে সামিহাকে আনতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হন মারুফ জামান।
এরপর ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মারুফ জামানের ব্যবহৃত গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-গ-২১-১৩৯৯) রাজধানীর ৩০০ ফিট রাস্তা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে খিলক্ষেত থানা-পুলিশ।
নিখোঁজ মারুফ জামানের ছোট মেয়ে সামিহা জামান বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচদিনেও আমার বাবার কোনো হদিস মেলেনি। নিখোঁজ হবার পরপরই কারা আমাদের বাসায় এসে বাবার ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে, তাদেরও কোনো পরিচয় বা তথ্য আমাদের দেয়নি পুলিশ।
থানায় যোগাযোগ করেছিলাম। পুলিশ জানিয়েছে ‘আমরা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি, কাজ চলছে, এখনও তথ্য মেলেনি’ –যোগ করেন তিনি।
এদিকে পুলিশের দাবি, নিখোঁজ মারুফ জামানকে উদ্ধারে পুলিশের সার্বিক তৎপরতা চলছে। এই ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি সরকারের অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে।
পুলিশ বলছে, বাসার সামনের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। নিখোঁজ হওয়ার পরপরই মাংকি ক্যাপ পরা সুঠামদেহী তিনজনকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও বাসার ল্যান্ডফোনে যে দুটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে সন্দেহজনক কল আসে, সেগুলোকে ট্রেস করার চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহিল কাফি বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো বিশ্লেষণের কাজ চলছে।
মারুফ জামানের অবস্থান জানতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।
সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে তিনি বলেন, ফুটেজটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে ওই তিনজনের কেউ-ই ক্যামেরার দিকে তাকায়নি। যার ফলে চেহারা স্পষ্ট বোঝা যায়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি।
মারুফ জামানের ছোট ভাই রিফাত জামান বাংলানিউজকে বলেন, ৪ ডিসেম্বর তার মেয়ে সামিহাকে বিমানবন্দর থেকে আনতে সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বাসা থেকে গাড়ি চালিয়ে বের হন তিনি। তার কিছুক্ষণ পর ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ বাসার ল্যান্ড ফোনে অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে মারুফ জামান বলে পরিচয় দিয়ে গৃহপরিচারিকাকে কেউ একজন বলেন, তার কম্পিউটার ঠিক করতে হবে। কেউ বাসায় এলে যেন তার কম্পিউটার দিয়ে দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর ৮টা ৫ মিনিটের দিকে তিনজন লোক বাসায় এসে তার ল্যাপটপ, কম্পিউটারের সিপিইউ, ২টি ক্যামেরা ও একটি স্মার্টফোন নিয়ে যায়। সে সময় মারুফ জামানের ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
জানা যায়, মারুফ জামান কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। বিভিন্ন সময় টেলিভিশনে টকশোতে অতিথি হিসেবে অংশ নিতেন। এছাড়া মারুফ জামান সর্বশেষ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। এর আগে তিনি কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর হিসেবেও কাজ করেছেন।
তিনি ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীতে সিগন্যাল কোরের ‘ষষ্ঠ কোর্স’ ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন এবং ২০১৩ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে অবসরে যান।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭
এসজেএ/জেএম