খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্যোশালাইজেশন সেন্টারটি রাজশাহীর স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র কমিউনিটিভিত্তিক একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে অনলাইনে তথ্য প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
শিক্ষিত কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে গ্রুপ তৈরি করে প্রথমে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই ব্যাপারে দক্ষ করা হচ্ছে। পরে তাদের দিয়ে মহানগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের বন্ধুদের কাছে ইন্টারনেটের অপব্যবহার সংক্রান্ত কুফল ও ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে এর মাধ্যমে তারা সমাজে শিশু-কিশোরদের যৌন হয়রানি ও নির্যাতন প্রতিরোধ করা এবং এই সংক্রান্ত ঝুঁকি কমিয়ে আনা।
এই ক্ষেত্রে স্যোশালাইজেশন সেন্টারটি এখন রাজশাহীর পিছিয়ে পড়া ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের পথ প্রদর্শক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের লেখাপড়ার সুযোগ কম হলেও প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং যৌন ঝুঁকি তাদের সমস্যার মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। স্যোশালাইজেশন সেন্টারটি সেই ঝুঁকি কমিয়ে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
স্যোশালাইজেশন সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কিশোর-কিশোরীরা তাদের সুবিধা মতো সময়ে সেখানে গিয়ে শিক্ষামূলক বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করছে। বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে, খেলাধুলা করছে, বিভিন্ন সমস্যার কথাও তুলে ধরতে পারছে।
শুধু তাই নয়, এখানে সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ ও নির্যাতিত শিশু-কিশোরদের কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের পরিবারকেও কাউন্সিলিংয়ের আওতায় আনা হয়ে থাকে। এককভাবে ছোট্ট পরিসরে হলেও এভাবে বিপথগামী শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এই সেন্টারের ইয়ুথ গ্রুপের সদস্য বন্যা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, শেখেরচক বিহারীবাগান কমিউনিটির ১৮ বছরের এক কিশোরীকে এক ছেলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ম্যাসেজ ও ছবি পাঠিয়ে বিরক্ত করতো। এমন কি কলেজে বা মার্কেটে যাতায়তের পথে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতো। ইয়ুথ গ্রুপের মাধ্যমে আমরা সেটা প্রতিহত করতে পেরেছি।
ওই সেন্টারে কাউন্সিলিংয়ের জন্য আসা একই এলাকার এমনই এক বিপথগামী কিশোর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সে ইন্টারনেট ও ফেসবুক আসক্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। মা-বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে। এমনকি স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার পথে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে আনন্দ পেতো। পরে তার মা-বাবা জোর করে তাকে স্যোশালাইজেশন সেন্টারে নিয়ে আসেন। এখানে এসে সে বিভিন্ন শিক্ষামূলক সেশনে অংশ নিয়ে এখন খারাপ পথ থেকে ফিরে এসেছে।
সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, স্যোশালাইজেশন সেন্টারের আওতায় ২৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিউনিটি ওয়াচ গ্রুপ এবং একটি ইয়ুথ গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। যারা সহযোগী গ্রুপ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের যৌন ও অন্যান্য পারিবারিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখছে।
রবিউল ইসলাম বলেন, এসিডি’র ইন্টারনেটের অপব্যবহার ও ট্যুরিজমের মাধ্যমে শিশুর যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের মার্চ মাসে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের ঘোষপাড়া বুলনপুর এবং ২৩নং ওয়ার্ডের বিহারীবাগান, শেখেরচকে দুইটি স্যোশালাইজেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২৭৫ জন শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সেবার আওতায় আনা হয়েছে। পরে আরও ছয়টি স্যোশালাইজেশন সেন্টার মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্থাপন করেছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
এসএস/আইএ