ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘গরিবের টাকা মেরেই ওদের শান্তি!’

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
‘গরিবের টাকা মেরেই ওদের শান্তি!’ আনসার সদস্যের সঙ্গে ভ্যানচালকদের ঘুষ নিয়ে সমঝোতা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ভ্যানভর্তি সবজি নিয়ে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কচুক্ষেত কাঁচাবাজারে যাচ্ছিলেন সাইফুল ও আসাদ। মিরপুর ১০ নম্বর মোড় ঘুরতেই তাদেরকে আটকালেন পরিবহন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্য।

আসাদ ও সাইফুলকে অপরাধ করেছেন বলে বোঝানোর চেষ্টা করলেন কিছুক্ষণ। এরপর ধরে নিয়ে গেলেন মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কাছে।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে আনসার সদস্য বললেন, ‘ওরা ভ্যান নিয়ে ঢুকেছে, ওদের তো ছাড়তে পারি না। আপনি একটা ব্যবস্থা করেন’।

দূরে চলে গেলেন আনসার সদস্য। ট্রাফিক পুলিশ আশরাফুল ‘কিছু একটা দে, ঠিক হয়ে যাবে’ বলার পর আসাদ ও সাইফুল লুঙ্গির গিট থেকে টাকা বের করে হাতের মুঠায় নেন।      

ট্রাফিক পুলিশ তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আনসার সদস্যের কাছে যায়। তার ভাব-ভঙ্গি এমন যেন,  বিবাদ মেটাতে যাচ্ছেন। ৪০০ টাকা দেওয়ার পর তবেই সবজিসহ ভ্যান ছাড়েন আনসার সদস্য।  

ঘটনা অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘটতে দেখে গালি দিয়ে এক রিকশাচালক বলেন, ‘সকালের দানটা মারলো, গরিবের টাকা মেরেই ওদের শান্তি’।

টাকা দেওয়ার পর আসাদ বলেন, ‘কচুক্ষেতে সবজিগুলো দিতে যাচ্ছি। পুলিশকে যে টাকা দিলাম, মালিক আমাকে তার অর্ধেক দেবেন। বাকিটা আমাকে নিজের টাকা থেকে দিতে হবে’।

‘সকালে এদিক দিয়ে সবজি নিতে কোনো বাঁধা দেয় না। আজকে একটু দেরি হওয়ায় আটকালো। অবশ্য টাকার জন্য তারা প্রায়ই এমন করে’।

টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আনসার সদস্য বলেন, ‘মেইন রোড দিয়ে রিকশা-ভ্যান চালানো নিষেধ। এজন্য আটকেছি। টাকা নিয়েছি কি-না- ওদেরকেই জিজ্ঞাসা করেন’।

সাইফুল জানান, তাদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিয়েছেন আনসার ও ট্রাফিক সদস্য।  ছবি: বাংলানিউজতবে সাইফুল জানান, তাদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিয়েছেন।

ট্রাফিক পুলিশ আশরাফুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আনসার সদস্য আমার কাছে এসে জানতে চাইলেন, আমি ছেড়ে দিতে বললাম। টাকা নিয়েছেন কি-না- জানি না’।

পুরো ঘটনাটি প্রতিবেদকের চোখের সামনে ঘটেছে, জানানোর পর ট্রাফিক পুলিশ সদস্য  বলে ওঠেন, ‘আপা যান তো, কাজ করতে দেন’।

পথচারীদের অভিযোগ, মিরপুর ১০ নম্বর মেইন রোডে রিকশা-ভ্যান চালানো নিষিদ্ধ। অথচ প্রায়ই চালকদের কাছ থেকে এমন ঘুষ নিয়ে অবাধে চলাচল করতে দেন ট্রাফিক পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। ফলে এ মোড়ে তীব্র যানজট লেগেই থাকে।  

কয়েকজন পরিবহন চালকও বলেন, ‘ট্রাফিক সার্জেন্ট-সদস্য, আনসার সবাই টাকা নেন, অল্প একটুতেই আমাদের হয়রানি করেন। ওই টাকা সবাই ভাগ করে খান। বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড টাঙানো, তাতে লেখা- ‘এখানে গাড়ি থামা নিষেধ’। এসব নিয়ম নয়, আসলে শুধু টাকা খাওয়ার ধান্দা’।    

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
এমসি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।