তিনি বলেছেন, ব্যাপক শিল্পায়নের লক্ষ্যে আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। আমি বাংলাদেশে ‘ফরাসি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
সফরকালে প্যারিসে প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল হোটেল ইন্টারন্যাশনাল প্যারিস লা গ্র্যান্ডে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এমইডিইএফ ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে আমার বার্তা পরিষ্কার। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ফ্রান্সের বিনিয়োগ প্রয়োজন, আর প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশের প্রয়োজন বিনিয়োগ।
প্রধানমন্ত্রী মুভমেন্ট অব দ্য এন্টারপ্রাইজেস অব ফ্রান্সের (এমইডিইএফ) প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, এ ধরনের সফর বাংলাদেশ ও ফ্রান্স মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের এই সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে এখানে ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে অংশ নিতে এসেছি।
‘আমার এই সামিটে অংশগ্রহণ প্যারিস চুক্তি (কপ-২১) সমর্থনের পুনরাবৃত্তি। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ঐক্যমত আনতে ফ্রান্সের নেতৃত্বের প্রশংসা করছে বাংলাদেশ। ’
তিনি বলেন, এ বছর বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫ বছর পূর্তি। আমি বিশ্বাস করি, এটা দুই দেশের মধ্যে সম্ভাবনা ও সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করার সুবর্ণ সময়।
‘মঙ্গলবার আমার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর খুবই ফলপ্রসু বৈঠক হয়েছে। আমরা উভয়ই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছি। ’
ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগে সুযোগ ও সম্ভাবনার আর্দশ জায়গা বাংলাদেশ। আমাদের রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ অনুকূল বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নীতিমালা। নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা গতবছর ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছি। এই উজ্জ্বল প্রেরণা ব্যাপক সুযোগ তৈরি করেছে।
‘এছাড়া সারাদেশে আমরা ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করেছি, যা মাধ্যমে প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ সেবা পাচ্ছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে নানা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক শক্তি তা এখন বিশ্ব স্বীকৃত।
‘প্রাইস ওয়দার হাউজ কোপারস (পিডব্লউসি) এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে আগামী তিন দশকে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে,’ যোগ করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে আমি উৎসাহী। দুই দেশের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য রয়েছে। ফ্রান্স এখন বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। ’
‘ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় থেইলস আলেনিয়া স্পেস বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ করছে। ২০১৮ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। ’
এছাড়া ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ফেইজ স্থাপনের কাজও ফরাসি কোম্পানি টেকনিপ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১৪ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার ফরাসি এফডিআই গেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের জন্য ফ্রান্সের জন্য আলাদা জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে।
‘বাংলাদেশে ১৬০ মিলিয়ন মানুষের বিশাল বাজার রয়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ আসিয়ান ও সার্ক অঞ্চলগুলোর জন্য প্রাকৃতিক গেটওয়ে। আমরা আঞ্চলিক কানেকটিভিটির উন্নয়ন ও বিনিয়োগে কাজ করছি। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে আপনারা গোটা অঞ্চলের বাজারে প্রবেশের সুবিধা পাবেন, যেখানে প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষের বাজার রয়েছে,’ ফরাসি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
এমইউএম/এমএ