আপত্তি সত্ত্বেও আবদুল হামিদ খেললেন এবং ভাগ্যক্রমে খেলায় মিঠামইন দল জিতেও গেল। এমন আরো অনেক ঘটনা রয়েছে তাঁর নেতৃত্ব থাকলেই কাকতালীয়ভাবে হলেও সফলতা আসতোই আসতো।
দেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ব্যাপারে এভাবেই শংসামূলক নানা কথা বলছিলেন, বিবরণ দিয়ে যাচ্ছিলেন তারই ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মো. আবদুল হক নূরু।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের কামালপুরে গিয়ে কথা হয় তার ভাই, স্বজন ও গ্রামবাসীর সাথে। দীর্ঘ আলাপে উঠে আসে রাষ্ট্রপতির জীবনের নানা দিকের কথা। রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জ যতবার এসেছেন সরকারি কোনো বাংলোতে না থেকে বাড়িতেই থেকেছেন। সকাল থেকে শুরু করে মাঝরাত অব্দি গল্প করেছেন গ্রামের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতির ছোট ভাই মো. আবদুল হক নূরু জানান, আজ দেশবাসী ৭২ বছর বয়সী একজন সফল মানুষকে দেখছেন নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতে। শৈশবে দেখেছি বড় ভাই ঘর থেকে খাবার নিয়ে দরিদ্র-ক্ষুধার্ত মানুষকে দিয়ে আসতেন। বড় ভাই তার চারিত্রিক দৃঢ়তায় ছিলেন অটল ও ক্লান্তিহীন। মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ, মায়া-মমতায় ভরা বিশাল হৃদয়টির দেখা পেয়েছি সেই শৈশব-কৈশোর থেকেই। তিনি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে পড়া অবস্থায় কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ছাত্র রাজনীতিতে আসার আগ থেকেই দেখেছি এলাকার ছেলেদের নিয়ে দল বেঁধে চলতেন। নেতৃত্ব দেওয়ার অনুশীলনটি সে সময় থেকেই।
মো. আবদুল হক নূরু আরো বলেন, কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে বিএ পাশ করে বড় ভাই ঢাকা গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা দেখে এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সাফল্য দেখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাইকে ডেকে বললেন ‘তোর ঢাকায় থাকার দরকার নেই। তোকে ল’তে ভর্তি করে দিচ্ছি। এলাকায় ফিরে যা। সেখানে গিয়ে রাজনীতি করবি। ’
এরপর বঙ্গবন্ধু সে সময়ের তুখোড় ও মেধাবী ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদের মাধ্যমে নিজ খরচে বড় ভাইকে আইন কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। আর বলে দেন, ‘পরীক্ষার সময় ঢাকায় এসে পরীক্ষা দিবি। ’
বঙ্গবন্ধুর উৎসাহে ভাই আরো বেশি করে জড়িয়ে যান আওয়ামী লীগের আদর্শিক রাজনীতিতে।
তিনি জানান, রাজনীতির কারণে আমার ভাই আজকের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দুঃখকষ্ট সয়েছেন অনেক। পাকিস্তানি সামরিক সরকারের আমলে তিনি যখন জেলে ছিলেন, তখন তার একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। কয়েক দিনের মাথায় সেই পুত্র সন্তানের মৃত্যু হয়। সেই দুঃসংবাদ নিয়ে আমরা জেলে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করি। সন্তানের মুখ দেখার আগেই তার মৃত্যু সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তাকে কাঁদতে দেখে আমরাও কেঁদেছি। কিন্তু এরপরও তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা।
স্থানীয় রাজনীতিতে রাষ্ট্রপতির ভূমিকার বিষয়ে তার এ ছোট ভাই জানান, তিনি দীর্ঘদিন কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন।
‘যতদূর দেখেছি তাঁর সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে বিপরীত আদর্শের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তার কারণে কখনো হয়রানির শিকার হননি। দলমত নির্বিশেষে সবাই আসত তাঁর কাছে। এ কারণে জেলার রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সবার সেতুবন্ধন। স্থানীয় কামালপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সেরাজুল হক ও মুফিজ মিয়া জানান, সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় উপনেতা, পরবর্তীকালে স্পিকার এবং বর্তমানে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে হাওরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিয়েছেন।
আজকের হাওরাঞ্চলের যেসব উন্নয়ন চোখে পড়ছে, সবকিছুতেই আছে তার হাতের ছোঁয়া। একজন রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি সব সময় হাওরের মানুষের কথা ভাবেন।
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গ্রামের মানুষরা জানান, দুঃখ-বেদনা আর সংগ্রাম হাওরের নিত্যদিনের চেনা। রাষ্ট্রপতি তার রাজনৈতিক জীবনে অনেক সাফল্য লাভের পরও হাওরের কথা একদিনের জন্যও ভোলেননি। সময়-সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন চিরচেনা জনপদে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
এসএইচডি/জেএম