বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রযুক্তি-পণ্য ল্যাপটপ মেলায় এসে সে কাজে প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান এই শহীদ-পুত্র।
তিনি বলেন, বিশেষ দিন আজ।
‘পৃথিবীর ইতিহাস অনেক যুদ্ধ দেখেছে, এখনও দেখছে। কিন্তু পৃথিবীতে বিরল একটি ঘটনা হচ্ছে ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাযজ্ঞ। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম আর কোন ঘটনা ঘটেনি, তালিকা করে একটি জাতির মননশীল ব্যক্তিদের, প্রথম সারির ব্যক্তি যারা জাতিকে পুর্নগঠন করবেন, বির্নিমাণ করবেন তাদেরকে ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হলো। ’
কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বুঝে গিয়েছিল, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা রুখতে পারবে না। এ দেশটি যাতে এগোতে না পারে সেজন্য তারা তালিকা করলো এবং একে একে এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তুলে নিয়ে হত্যা করলো….।
এটা মোটেই একটি সাধারণ ঘটনা নয়, দীর্ঘ দিনের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন বিপুল রায়হান। বলেন, ১৪ ডিসেম্বর আসল তাৎপর্যের জায়গাটিতে ফোকাস দিতে আমরা বরাবর ব্যর্থ হয়েছি। এখন সেই জায়গায় জোর দিতে হবে।
‘মানব জাতির ইতিহাসে আমাদের জন্য দু’টো গৌরবোজ্জল বিষয় আছে- একটি বাহান্ন’র ভাষা আন্দোলন, মাতৃভাষার জন্যে একমাত্র জাতি হিসেবে আমরা রক্ত দিয়েছি। এটা যেমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, ঠিক তেমনি একমাত্র বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে ১৪ ডিসেম্বর। এই জায়গাটাকে যখন আপনি ফোকাস করবেন, দেখতে পারবেন কতো ঘৃণ্য অপরাধ পাকিস্তান ও তার এদেশীয় দোসর-দালালেরা করেছে। ’
সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজার হলে তরুণ প্রজন্মের সামনে আহ্বান জানিয়ে বিপুল বলেন, আমি জোর দিয়ে বলছি, জাতীয় জীবনে আগামী এক বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একবছরের মাথায় এদেশে একটি সাধারণ নির্বাচন। বাংলাদেশের সব দিক উন্নতির দিকে, কারণ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতায়। আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি। তবে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, কিন্তু আমরা কথা বলতে পারছি।
‘আগামী ভোটে আপনারা যদি একটু ভুল করে যান, তাহলে আবার পেছন দিকে হাঁটতে শুরু করবো। এদেশে আমরা কথাগুলো বলতে পারবো না। একটু আফগানিস্তানের দিকে তাকান, সিরিয়ার দিকে তাকান, ইরাকের দিকে তাকান, হলি আর্টিজানের কথা স্মরণ করুণ…। ’
তিনি বলেন, আমরা খুবই ক্রান্তিকালের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি, যে ভোটটা দেব সেটা কিন্তু একটা সাধারণ ভোট না যে, গেলাম আর সিল দিয়ে চলে এলাম, কোন প্রার্থী পছন্দ হলো কি হলো না! এটার সঙ্গে জড়িত আছে আপনার অস্তিত্ব। এটার সঙ্গে জড়িত আছে আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মের বিকাশ, এই দিবসটির তাৎপর্য এখানে।
বুদ্ধিজীবী দিবসকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পাকিন্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, যাতে সারা পৃথিবীতে চিহ্নিত হয়, সেই কাজটি করার দায়িত্ব আপনাদের (তরুণ প্রজন্মের)।
‘প্রযুক্তির মাধ্যমেই এই কাজটি করবেন, তুলে ধরবেন যে পাকিস্তান ১৪ ডিসেম্বরে কী করেছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আর নেই, হিটলার যে কাজটি করেনি, ইয়াহিয়া সে কাজটি করে গেছে!”
কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এখন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে আছি, কারণ আমার পূর্বপ্রজন্ম, আমার পিতা জহির রায়হান থেকে শুরু করে অনেকেই যে কারণে আত্মোৎসর্গ করেছেন, সেগুলো যেন আমরা সব অর্জন করতে পারি। আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, মধ্যম আয়ের দেশ পেয়েছি, লাল-সবুজ পতাকা পেয়েছি। কিন্তু মুক্তির যে যুদ্ধ সেটা চলমান রয়েছে। সে যুদ্ধে আমি, আপনি, আমরা সকলে শামিল আছি।
‘আমরা যখন স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি, সেখানে দাঁড়িয়েও আমাদেরকে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিন্তা করতে হয়। এখনও নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ, রামু- এ সমস্ত ঘটনা ঘটে। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বির্নিমাণের যুদ্ধটা প্রথম, আমরা পেছন দিকে যেতে চাই না। ”
নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন ছিল তার দুই ছেলে-মেয়ে। আরো ছিলেন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএম