কয়েকটি কারণে নগরজুড়ে ধূলার এহেন আগ্রাসন। কারণগুলোর মধ্যে আছে যানবাহনের অধিক চলাচল, শহরের রাস্তায় ঘনঘন ও যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি, নতুন বাড়ি ও নানা অবকাঠামো ভাঙ্গা-গড়ার কাজে ধূলো ও জঞ্জাল প্রতিরোধকের ব্যবস্থা না রাখা, ড্রেনের ময়লা রাস্তায় পাশে উঠিয়ে রাখা, ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে দীর্ঘসূত্রতা।
অতিমাত্রায় ধূলার কারণে চরম অস্বস্তিতে নগরবাসী। আর এতে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ধূলাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগজীবাণুমিশ্রিত ধূলা ফুসফুসে প্রবেশ করে। এই ধূলা ফুসফুসের ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, শ্বাসজনিত কষ্ট, হাঁপানি ও যক্ষ্মাসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করছে। রাস্তার পাশে দোকানের খাবার প্রতিনিয়ত ধূলায় বিষাক্ত হচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ছে তারাই সবচেয়ে বেশি।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ধূলার আধিপত্য। এমন কোনো সড়ক নেই যেখানেই ধূলার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। ধূলা রোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ঘটা করে পানি ছিটানোর গাড়িও নামিয়েছিল বিভিন্ন সড়কে। কথা ছিল, প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে দুবার করে পানি ছিটানো হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। পানি ছিটানোর ঢাকঢোল পেটানো কার্যক্রমটি এখন পর্যন্ত উদ্বোধন আর ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ।
দক্ষিণের আওতাভুক্ত যাত্রাবাড়ী এলাকায় চলছে ফোরলেন রাস্তা নির্মাণের কাজ। সেখানে ধূলার পরিমাণ এতোই বেশি যে প্রচন্ড রোদের মধ্যেও মনে হবে ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে সব। ওই রাস্তা দিয়ে একবার যাতায়াত করলে পরিধেয় পোশাক না ধুয়ে ফের তা গায়ে জড়ানো কঠিন। একই অবস্থা শনির আখড়ার।
ধূলা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে ‘নিয়মিত রাস্তায় পানি ছিটানো হচ্ছে’ বলে দাবি করেন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো.শফিকুল আলম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত পাটি ছিটিয়ে রাস্তা ভিজিযে যাচ্ছি। এখন ধূলা তো থাকবেই, আমরা তো সারাদিন রাস্তায় পানি ঢালতে পারবো না!’
সিটি কর্পোরেশন পানি ছিটানোর দাবি করলেও আজিমপুরের বাসিন্দা মজিবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথম দুই একদিন পানির গাড়ি এসেছিল,এখন আর দেখা যায় না। রাস্তায় এতো পরিমাণ ধূলা যে, বাসার জানালা খুলতে পারি না। সারাদিন সব জানালা, দরজা বন্ধ করে থাকতে হয়। একটা অস্বাস্থ্যকর, অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে আছি আমরা। ’
ধূলাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে মতামত জানার জন্য ডিএসসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহ্উদ্দীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ডিএসসিসি’র প্রধান সড়কগুলো ধূলামুক্ত রাখতে গত ০৯ নভেম্বর দুপুরে নগরভবনের সামনের সড়কে পানি ছিটানোর মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করে মেয়র সাঈদ খোকন। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো পানি ঢেলে ধুয়ে পরিষ্কার করতে ৯টি গাড়ি ব্যবহার করা হবে। প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর সড়কগুলোতে পানি ঢালার কাজ হবে। দ্বিতীয় সিফট দুপুর ১ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত পানি ছিটানো হবে। কিন্তু তার বাস্তব প্রতিফলন এখনো সেভাবে দেখছেন না ধূলার অত্যাচারে নাজেহাল নগরবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এসএম/জেএম