ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৩০ হাজার অটোরিকশায় অতিষ্ঠ ফরিদপুর শহরবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
৩০ হাজার অটোরিকশায় অতিষ্ঠ ফরিদপুর শহরবাসী ভাবতেই অবাক লাগে ফরিদপুরের মতো ছোট্ট একটা শহরে ৩০ হাজার অটোরিকশা। ছবি: রেজাউল করিম বিপুল

ফরিদপুর: মাত্র ২২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পৌরসভা। অথচ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এতটুকুন এলাকায় দিন-রাত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিবন্ধনহীন প্রায় ৩০ হাজার অটোরিকশা! অনিয়ন্ত্রিত এসব অটোরিকশার সীমাহীন দৌরাত্ম্য ও এসবের কারণে সৃষ্ট তীব্র যানজটে ফরিদপুর শহরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ।

শহরবাসীর এই সমস্যার বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ‘দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলে বারবার আশ্বাসই কেবল দিয়েছেন। কিন্তু অবস্থা রয়ে গেছে সেই আগের মতো।

তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মধুমাখা মুখের বুলি হয়েই থেকে গেছে বছরের পর বছর। অন্যদিকে শহরজুড়ে অটোরিকশার বহর ক্রমাগত বেড়েছে। এর ফলে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে আর ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নাগরিকেরা।

ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ড হয়ে হাজী শরীয়াতুল্লাহ বাজার, আলীপুর ব্রিজ হয়ে জনতা ব্যাংক মোড়, জনতা ব্যাংক মোড় থেকে থানা রোড হয়ে ঝিলটুলী অনাথের মোড়, ভাঙ্গা রাস্তার মোড় থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টেপাখোলা থেকে নিউ মার্কেট ----শহরের কেবল এই ৪/৫ বর্গকিলোমিটার রাস্তায়ই চলে ত্রিশ হাজারের মধ্যে প্রায় ১৪/১৫ হাজার অটোরিকশা।

শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ের ওষুধ ব্যবসায়ী ওহিদুল ইসলাম বাবু। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে দুপুর বেলা ১টা,  আবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত অটোরিকশার চাপে শহরে ভালোভাবে চলাফেরা করাই দায়। ভাঙ্গা রাস্তার মোড় থেকে জনতা ব্যাংক মোড় হয়ে মুজিব সড়কের স্বর্ণকার পট্টিতে যেতে মাত্র ১ কিলোমিটার পথ পেরোতেই ১০ মিনিট সময় লেগে যায়। অনেক সময় এর থেকেও বেশি সময় যানজটে পড়ে থাকতে হয়। যানজট না থাকলে ২ মিনিটেই এটুকু পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব হতো।

জনতা ব্যাংক মোড়ের ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম বলেন, ছেলেকে নিয়ে আলীপুর থেকে ঝিলটুলী মাত্র এক কিলোমিটার দূরের স্কুলে যেতে ১৫ মিনিট সময় লেগে যাচ্ছে। জনতা ব্যাংক মোড়ে অটোরিকশার কারণে সাধারণ মানুষ চলাফেরাই করতে পারে না। ৪০ ফুটের এই রাস্তা পার হতে সুস্থ-সবল মানুষেরই ৪/৫ মিনিট লেগে যায় অটোরিকশাজনিত যানজটের কারণে। সেখানে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা তো আরো অসহায়! জনতা ব্যাংক মোড়ে একটি ফুটওভারব্রিজ তৈরি করা হলে কষ্ট একটু কমতো। তাই এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

আব্দুল ওহাব সরদার নামের এক শিক্ষক বলেন, যানজট তো বটেই, তার ওপর যেভাবে অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতা চলে তাতে আমরা মারাত্মক শব্দদূষণের শিকার হচ্ছি। স্কুল বা হাসপাতালের সামনেও চালকেরা এতটুকু সংযত হচ্ছে না। এভাবে যানজটের এই তীব্রতা ও শব্দদূষণ বাড়তে থাকলে আগামীতে আরো অনেক বেশি সমস্যার সৃষ্টি হবে। এখনও সময় আছে ব্যবস্থা গ্রহণের।

তাই যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনটাই আশা ওহাব সরদারের মতো লাখো শহরবাসীর।

ট্রাফিক পুলিশ ইন্সপেক্টর আমিনুর রহমান বলেন, অটোরিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে যানজট ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল না হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার অটোরিকশা শহরে প্রবেশ করে। এসব অটোরিকশার চালকদের বেশিরভাগেই কোনো রকম প্রশিক্ষণ নেই। এরা ট্রাফিক পুলিশের কোনো রকম সিগন্যালের পরোয়া করে না। এরা যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠায়-নামায় । অটো ঘোরানো প্রয়োজন হলে যেখানে আছে সেখান থেকেই ইউটার্ন নিয়ে নেয় এরা। এর ফলেও বেঁধে যায় যানজট ।   আমরা পৌর মেয়র ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি।

ফরিদপুর পৌরসভায় মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেথু যানজটের বিষয়ে দু:খ প্রকাশ করে বলেন, অটোরিকশা চালকদের সচেতন করতে পৌরসভা থেকে মাইকিং শুরু হয়েছে।   খুব দ্রুতই  অটোরিকশাগুলোকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। বাকি সব অটোরিকশাকে শহর থেকে বের করে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।