সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিক দুলাল হোসেনের বাবা আকবর আলী মণ্ডলের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যেও চলছে শোকের মাতম।
রোববার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউনিয়নের বালুকোল গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় নিহত দুলাল হোসেনের স্বজন ও গ্রামবাসীর সঙ্গে।
হতদরিদ্র আকবর আলী মণ্ডল জানান, তার পাঁচ ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে মেঝ ছেলে আবু বক্কার মানসিক প্রতিবন্ধী। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। তিন বছর আগে ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করা অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বড় ছেলে ফুলাল। আর এ ঘটনার এক বছর পর ঢাকাতেই আরেক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার সেজ ছেলে হানিফ। প্রায় মাস তিনেক আগে বগুড়ায় ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত অবস্থায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন তার ছোট ছেলে বাবু। সে এখনও চিকিৎসাধীন।
এ অবস্থায় শনিবার (৬ জানুয়ারি) সৌদি আরবে কোম্পানির গাড়ি চড়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তার চতুর্থ ছেলে দুলাল হোসেন।
এ সময় শোকে পাথর আকবর আলী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আর কত ছওয়ালের লাশ কাঁন্দে নিমু। আল্লায় আমাক বাচাইয়্যা রাহে ক্যা।
নিহত দুলালের স্ত্রী জানান, প্রায় এক বছর আগে সাড়ে ছয় লাখ টাকা ঋণ করে তার স্বামীকে সৌদি আরব পাঠান। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতেও তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি ১০ বছর সৌদি আরবে কাজ করার কথা বলেন। কিন্তু ১০ ঘণ্টা পর তার মৃত্যুর খবর এলো।
প্রতিবেশী আব্দুল হাকিম ও মুছাউদ্দিন মণ্ডল জানান, তিন সন্তানের জনক দুলাল। অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে সংসার চলছিল। অভাব দূর করতেই ঋণ করে সৌদি আরব যান তিনি। তার মৃত্যুতে অসহায় এ পরিবারের বেঁচে থাকার আর কোনো সম্বল রইলো না।
সৌদি আরব থেকে দুলালের মরদেহ দ্রুত আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান দুলালের চাচা আমির হোসেন ও ছোট ভাই বাবু শেখ।
স্থানীয় ঝাঐল ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন ঠান্ডু বাংলানিউজকে বলেন, নিহত দুলালের পরিবারটি একেবারেই নিঃস্ব। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল দুলাল। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ বলেন, সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্যান্য ৯ সহকর্মীর সঙ্গে দুলাল নিহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। গণমাধ্যমে খবর পেয়ে দুলালের স্বজনদের ঠিকানা খুঁজে বের করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, ০৭ জানুয়ারি, ২০১৮
আরএ