কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (০৭ জানুয়ারি) সকালে আয়াত উল্লাহ নামে ওই অভিভাবকের ওপর খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক এবং তাদের অনুসারীরা মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
হাত-পা বেঁধে মারধরের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় তোলপাড় চলছে। ঘটনায় জতিড়দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে স্থানীয়রা।
প্রত্যেক্ষদর্শী সূত্র জানায়, নির্যাতনে শিকার আয়াত উল্লাহর ছেলে শাহরিয়ার নাফিস আবির খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। সে প্রথম শ্রেণিতে ‘এ প্লাস’ না পাওয়ার বিষয়ে জানতে সকালে স্কুলের প্রধানশিক্ষক বোরহান উদ্দিনের কাছে যায় আয়াত উল্লাহ। একই সময় পূর্বঘোষণা ছাড়াই ভর্তি ও মাসিক কেন বাড়ানো হয়েছে বিষয়টিও জানতে চান তিনি। এ নিয়ে বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।
এ সময়ে পার্শ্ববর্তী খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হককে ডাক দেয় বোরহান। শুরু হয় ত্রি-মুখী তর্ক-বিতর্ক। ঘটনাটি এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ সময় ওই দুই শিক্ষক মিলে তাকে মারতে মারতে মাটিতে ফেল দেয়। পরে রশি দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী কাসেম বলেন, আয়াত উল্লাহকে এমনভাবে মারা হচ্ছে যেন তিনি একজন বড় সন্ত্রাসী। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে নির্যাতন করা হলেও কোনো শিক্ষক তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। পরে তার চিৎকার শুনে স্কুলের আঙ্গিনায় গিয়ে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে।
ঘটনার বিষয়ে আয়াত উল্লাহর বলেন, দুই স্কুলে প্রায় সময় অনিয়ম করা হয়। কিছু দিন আগে কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ করা হয় খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। কেজি স্কুলে নানা অনিয়ম রয়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনিয়ম করে অনেক শিক্ষক। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে।
তিনি বলেন, আমার ছেলের কাঙ্খিত ফলাফল কেন হয়নি? কোন যুক্তিতে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে? জানতে চাওয়ায় আমার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। দুই শিক্ষকই এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। মাস্টার জহিরুল হক, মাস্টার নজিবুল্লাহ, নুরুল হকসহ আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষক আমার উপর নির্যাতনে সরাসরি জড়িত।
এ বিষয়ে খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, আয়াত উল্লাহ আমার সঙ্গে ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। আমাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাকে বেঁধে মারধর করেছে।
এসময় ভিডিওর বরাত দিয়ে- লুঙ্গি পরা লোকগুলো স্কুলের ছাত্র কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লুঙ্গি পরা সবাই ছাত্র, স্কুল হোস্টেলে থাকে। তারা হোষ্টেল থেকে বের হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক বলেন, আয়াত উল্লাহ আমাদের স্কুলের সাবেক ছাত্র। বেয়াদবি করায় তাকে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে। এমনকি আর কোনো দিন ‘বেয়াদবি করবে না’ মর্মে মুছলেকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তবে, একজন শিক্ষক হিসেবে হাত-পা বেঁধে মারধর করা উচিৎ হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সঙ্গে নিজেকে জড়িত নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি ক্ষুব্ধ লোকজন ঘটিয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিৎ কুমার বড়ুয়া বলেন, ঘটনাটি আমি রাত ৮টার দিকে শুনেছি। বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক অভিযুক্তদের আটকের জন্য আমি পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছি।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নোমান হোসেন বলেন, শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে এমন আচরন আশা করা যায় না। খুনের আসামি কিংবা বড় মাপের কোনো অপরাধীকেও এভাবে শাস্তি দেয়ার বিধান নেই। এটি চরমভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
টিটি/এসএইচ