গত ৯ জানুয়ারি ডিএনসিসি’র মেয়র পদে উপ-নির্বাচন, নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ নির্বাচন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সে তফসিল অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়, আর ভোট ছিলো ২৬ ফেব্রুয়ারি।
তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত মঙ্গলবার ভাটারা থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান এবং বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) শুনানি শেষে আদালত আগামী তিন মাসের জন্য ওই তফসিলের ওপর সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে ওই নির্বাচনের জন্য তফসিল কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
স্থানীয় সরকার সচিব, নির্বাচন কমিশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র, নির্বাচন কমিশন সচিব ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিবকে এর জবাব দিতে হবে।
এখনও ভোটার তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় কিভাবে প্রার্থী হবেন এবং ৩০০ ভোটার সমর্থকের স্বাক্ষর নেবেন। এছাড়া যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন তাদের মেয়াদ কি আড়াই বছর না পাঁচ বছর হবে- এসব প্রশ্নকে সামনে রেখে ওই রিট আবেদনটি করা হয়।
আদালত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের রায় দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভোটের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রায়ের কপি দেখেই পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহাম্মদ খান বাংলানিউজকে জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাদের কাছে রায়ের কপি পৌঁছেনি। তাই বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ইসির আইনজীবীর মাধ্যমে রায় সংগ্রহ করা হবে। এরপর তা কমিশন বৈঠকে তোলা হবে। নির্বাচন কমিশন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি-না। এছাড়া আদালত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রুলের জবাব দেওয়া হবে।
এদিকে কমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব কারণে আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, তার গ্রাউন্ড খুব শক্ত নয়। আপিল করলে টিকবে না। তাই সব প্রস্তুতি শেষ করে এসে এভাবে থমকে যাওয়া উচিত হবে না। কমিশনের আপিল করা উচিত।
সম্প্রতি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩১ জানুয়ারি। এক্ষেত্রে নতুন ভোটাররা এখনো তালিকাভুক্ত হননি। মূলত এই গ্রাউন্ড থেকেই রিট আবেদনটি করা হয়েছে। কেননা, স্বতন্ত্র থেকে যারা প্রার্থী হবেন, তাদেরকে ৩০০ ভোটার সমর্থকের স্বাক্ষরসহ মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে।
হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, এই স্থগিতাদেশ উঠে গেলে আবারো সময়সূচি ঘোষণা করা হবে। তবে যারা এরইমধ্যে মনোনয়নপত্র কিনেছেন, তাদের আর কিনতে হবে না।
এর আগে ২০১২ সালেও আইনি জটিলতার কারণে একবার ডিসিসি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন আদালত। ওই বছর ৯ এপ্রিল তফসিল ঘোষণা করে ২৪ মে ভোটগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছিলেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন। কিন্তু সীমানা জটিলতা নিয়ে রিট আবেদনের কারণে এ নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর তিন বছর প্রশাসক দিয়েই কাজ চালায় সরকার। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল পরবর্তীতে ভোটগ্রহণ হয় দীর্ঘ ১৩ বছর পর।
২০১৫ সালের আগে একীভূত ডিসিসি’র নির্বাচন হয়েছিলে ২০০২ সালে ২৫ এপ্রিল। নির্বাচিত কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের মে মাসে। সে হিসেবে মেয়ার অতিবাহিত হওয়ার ৮ বছর পর নগরপিতা নির্বাচনের সুযোগ পান ঢাকা সিটিবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৮
ইইউডি/জেডএস