আনিসকে নিয়ে রূবানা কিছু বলার পর আমার বলা খুবই কঠিন। বলছিলেন ড. আনিসুজ্জামান।
তিনি বলেন, একজন প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা মানুষ কয়েক মাসের মধ্যে নিঃশেষ হয়ে গেলেন, এটা কখনো ভাবিনি। টিভিতে তাকে যখন উপস্থাপক হিসেবে দেখেছি, তার বাকপটুতা, প্রতুৎপন্নমতি ও বিষয়ের উপর অধিকার আমাদের মুগ্ধ করতো। বিষয়ের উপর অধিকারের জন্য প্রস্তুতি লাগে। সে পরিচয়ও তিনি রেখেছেন বিভিন্ন নির্বাচন ভিত্তিক টকশো উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে।
এর আগে আনিসুল হকের স্ত্রী রূবানা বলেন, আনিস নতুন একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে গেছেন। ওর শিল্পী সত্ত্বা না থাকলে এমনটা হতো না। ও চেয়েছিল বীরের মতো যাবে, সেভাবেই হয়েছে। তারপরেও ও যায়নি। আমাদের ও নতুন আনন্দে জাগাতে শিখিয়ে গেছে। আনিস গেছে বিজয়ীর বেশে, আর আমি নিঃস হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
এসময় প্রয়াত মেয়রের নিজ হাতে গড়া নাগরিক টিভি আগামী মাসেই যাত্রা শুরু করবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি আনিসুল হকের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয়ের কথা তুলে ধরেন রূবানা হক।
সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আনিসুল হক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, আনিসের প্রতিটি কাজে মেধার ছাপ ছিল। তিনি তার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বার্তা দিয়ে গিয়েছেন। রাজনীতিতে সুষ্ঠু চিন্তার মানুষ না থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে না। আনিস ছিল সেই সুস্থ চিন্তার একজন মানুষ। আনিস খুব ভালো আবৃত্তি করতো, একটার পর একটা মুখস্থ কবিতা বলতো। সব মিলিয়ে সে ছিল পরিপূর্ণ একজন বাঙালি, পরিপূর্ণ একজন মানুষ।
আলোচনা সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন মহাসচিব ওমর সাদাত। এসময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক ও কথা সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নওয়াজেশ আলী খান ও আনিসুল হকের স্ত্রী রূবানা হক।
কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, আনিসুল হক কাজ ভালোবাসতেন। তিনি তার প্রজ্ঞা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশ পরিবর্তনের কাজ করেছেন। তিনি উদার, একজন বড় হৃদয়ের মানুষ, আর দশ জন মানুষের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দিক দিয়ে আমাদের রাজনীতিকরা আনিসুল হককে অনুসরণ করতে পারেন। তাতে আমাদের উন্নয়ন অনিবার্য।
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, তার উষ্ণতা, বলিষ্ঠতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। মানুষ এ নগরীকে যেভাবে দেখতে চায়, সে সেভাবেই কাজ করতে শুরু করেছিল। আনিসুল হাসতো প্রাণ খুলে। তার হাসি ছিল স্বর্গ-মর্ত্য মাতানো। একটা জাতির প্রতিভাবান ব্যক্তিরা সেই জাতির প্রিয় প্রতিপক্ষ হয়ে জন্মায়, আনিসুলও ছিল তাই। সে ছিল একটা স্টার।
আনিসুল হকের বন্ধু ছিলেন জুয়েল আইচ। বন্ধু সম্পর্কে তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন টিভি উপস্থাপক আর অতিথিরা অনেকটা শত্রুর মতো ছিল। আনিসুল হক হল প্রথম মানুষ, যিনি সমস্ত উপস্থাপকের বন্ধু হলেন। সে অনেক ভালো একজন বন্ধু ছিল। ও সবসময় অদ্ভুত কিছু করার চেষ্টা করতো, যা সবার থেকে আলাদা।
টিভি উপস্থাপনার সূত্র ধরে আনিসুল হকের পরিচয় হয় নওয়াজেশ আলী খানের সঙ্গে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বলেন, পারফেক্টসনিস্টদের একজন ছিলেন আনিসুল হক। তিনি সবদিক দিয়ে ছিলেন পরিপাটি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আনিসুল ভাইয়ের ক্ষয় নাই। তিনি ছিলেন, তিনি থাকবেন। নমিনেশন পাওয়ার পর এখন যদি আমায় কেউ প্রশ্ন করে, মেয়র হিসেবে আপনি কি করবেন? তবে বলতে হয়, আনিস ভাই যে পরিকল্পনা করে রেখে গেছেন, তা যদি সম্পূর্ণ করতে হয়, তবে এখনো ২০ থেকে ২৫ বছর সময় লাগবে যে কারো।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আনিসুল হককে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর তাকে স্মরণ করে গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের কর্মময় জীবন নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘নাগরিক’ প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন তুষার আব্দুল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৮
এইচএমএস/আরএ