কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি পরিবেশে সবুজ গাছ-গাছালির মাঝে প্রায় দুই’শ বছর আগে ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামে ইট-সুরকি দ্বারা নির্মিত হয় বাড়িগুলো। জমিদার বাড়ির একতলা ও দোতলা ভবন বাহারি ফুলে সজ্জিত ছিলো।
জমিদার আমলে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ির হাতিশালে হাতি ও ঘোড়াশালে ঘোড়ায় ভরপুর ছিলো। বাবুর্চি, খামারি, পাইক-পেয়াদা-সিপাই-লস্করের ছিলো বিশাল বহর। ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ির ছিল বিশাল মেহমানখানা। এখানে প্রতি সপ্তাহে জমিদারি এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা, কৃষি-সামাজিক বিষয় নিয়ে গ্রাম প্রধানদের নিয়ে হতো আলোচনা।
স্থানীয় ও জমিদার বংশধরদের সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই’শ বছর পূর্বে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারের গোড়াপত্তন করেন নবীর মোহাম্মদের একমাত্র ছেলে ফুল মোহাম্মদ। এক সময় বাণিজ্যিক কার্যক্রম করতে আসা ফুল মোহাম্মদ তৎকালীন ১১টি থানা নিয়ে শুরু করেন জমিদারি। ১১ থানায় ১৮টি কাচারি ও ৪১টি তহসিল কার্যালয়ের মাধ্যমে চলত ঘুঘুডাঙ্গার জমিদারিত্ব। ব্রিটিশ সরকার আমলে দিনাজপুরের সব জমিদারদের মধ্যে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার ছিলেন অন্যতম।
ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার ব্রিটিশ সরকারকে বছরে ১১টি থানার খাজনা দিত ১ লাখ টাকা। ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারের স্থায়িত্ব ছিল ৮০ বছরের অধিক। ১৯৫৬ সালে জমিদারি প্রথা বাতিল হলেও ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার স্থানীয়দের সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিল।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নেয় জমিদার বাড়িতে। বিষয়টি টের পেয়ে পাক বাহিনীর সৈন্যরা ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়িতে হামলা চালায়। পাক বাহিনীর বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ির অনেক স্থাপনা। তারা জমিদার বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়।
মূল্যবান জিনিসপত্রের মাঝে ছিল- ১০১ ভরি ওজনের একটি সোনার কই মাছ, রুপার বাটযুক্ত ছাতা-হাত পাখা, রুপার বিশাল লাঠি, তামার বড় হাড়িসহ বিভিন্ন মালামাল। তবে সোনার তৈরি একটি চেয়ার এখনও জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে।
পাক বাহিনীর হামলায় বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের পর ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রবেশদ্বার।
স্থানীয় ঘুঘুডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো. ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ধ্বংসপ্রাপ্ত হিসেবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়িটি স্থানীয় অনেক ঘটনার সাক্ষী। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে জমিদার বাড়িটি সংস্কার করা জরুরি।
তিনি বলেন, প্রায় দুই’শ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে সংরক্ষণ করলে যেমন জানা যাবে ইতিহাস, তেমনি এটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে।
এলাকাবাসীর দাবী, এখনও অবশিষ্ট থাকা জমিদার বাড়ির দৃষ্টিনন্দন নানা সামগ্রী দিয়ে একটি জাদুঘর করা সম্ভব। এ এলাকায় একটি জাদুঘর হলে কর্ম সংস্থানের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। সরকারও বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় করতে পারবে। যা দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীত করতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৭ ঘন্টা, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮
এমএইউ/