তাদের যখন নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার, ঠিক তখনই তারা এই দাবিগুলো পেশ করেছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসছে।
এ ছয়দফার মধ্যে রয়েছে নাগরিকত্বের অধিকার, ভূমি ফিরে পাওয়া এবং হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের বিচার। এ দাবিতে এরই মধ্যে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা শুরু করেছেন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতারা।
রয়টার্স বলছে, এরই মধ্যে কমপক্ষে ছয়জন রোহিঙ্গা নেতা বার্মিজ ভাষায় (হাতে লেখা) একটি স্মারকলিপির খসড়া তৈরি করেছেন। যাতে ওই দাবিগুলো করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কমপক্ষে ৪০টি গ্রামের মানুষের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে তাদের। স্মারকলিপি চূড়ান্ত হলেই তা বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে তা তুলে ধরা হবে।
ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকার যতক্ষণ না এসব দাবি পূরণ করছে, ততক্ষণ তারা আশ্রয় শিবির থেকে কোথাও যাবেন না।
রোহিঙ্গাদের ছয়দফা দাবি হলো- (এক) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে সরকারি ঘোষণা দিতে হবে এবং মিয়ানমারের স্বীকৃত নৃ-গোষ্ঠীর তালিকাতে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
(দুই) যে ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের সেই ভূমি, বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা আর স্কুল তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। ধ্বংস হওয়া সব স্থাপনা পুনঃনির্মাণ করে দিতে হবে।
(তিন) সেনা অভিযানের নামে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যাতে এ ধরনের ঘটনা চিরতরে বন্ধ হয়।
(চার) সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে যেসব নিরাপরাধ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে।
(পাঁচ) অন্যান্য জনগোষ্ঠির মানুষের মতো রোহিঙ্গাদেরও অবাধ চলাচল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ দিতে হবে।
(ছয়) মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এবং ফেইসবুক পেইজগুলোতে রোহিঙ্গাদের যেভাবে বাঙালি সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে- তা বন্ধ করতে হবে।
গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অধিকাংশই আছে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে।
১৬ জানুয়ারি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে আগামী সপ্তাহে শুরু করে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতে যে বিপুল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, রাহিঙ্গাদের এ দাবিনামা তার একটি নমুনা।
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
আরএম/এসআই