রাজধানী জুড়ে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। এই সংকটে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নগর জীবন।
আজিমপুর, মগবাজার, মালিবাগ, এ্যালিফেন্ট রোড, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পল্লবী, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও তালতলা, যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, মুগদাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় গ্যাস আসছে কোথাও সকাল গড়িয়ে বিকেলে, কোথাও সন্ধ্যা বা মধ্যরাতে।
গ্যাস সংকটে নগরীর অনেক পরিবারে সারাদিন জ্বলে না চুলা। ফলে মাটির চুলা ও এলপিজিতে (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস ) রান্নাবান্না সারতে বাধ্য হচ্ছেন গৃহিনীরা। শীতের শুরু থেকে গ্যাস সংকটের এই তীব্রতা শুরু হয়েছে বলে জানায় বাসিন্দারা।
অন্যদিকে, এমন গ্যাস সংকটের মধ্যেও দাম বাড়ার অজুহাতে প্রত্যেক বাড়ির মালিক ৫০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছে।
শীতকালে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। গরম পানি করাসহ বিভিন্ন কারণে গ্যাসের অপচয়ও বেশি হয়। ঘাটতির সঙ্গে সরবরাহ পর্যাপ্ত না হওয়ায় এ সংকট বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
মোহাম্মদপুরের অনেক বাসাবাড়িতে গত দুই মাস যাবৎ সারাদিনে গ্যাসের দেখা পাওয়া যায় না। গ্যাস আসে মধ্যরাতে। এ কারণে বাসাবাড়ির বাসিন্দারা সিলিন্ডারে বা ইলেক্ট্রিক চুলায় রান্না করছে।
রামপুরা-বনশ্রী এলাকার প্রায় বাসায় সারাদিন গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলে না। অথচ, এ এলাকায় ৫০০ থেকে ২ হাজার ভাড়া বাড়িয়েছে বাড়ির মালিকেরা।
রামপুরার মতো আজিমপুর এলাকারও একই অবস্থা। ছাপড়া মসজিদ এলাকার বটতলার দেওয়ান বাড়ির বাসিন্দা শীলা মণ্ডল বলেন, পুরো শীতে এমন গ্যাসের সংকট। কয়েকদিন ধরে এত তীব্র সমস্যা যে রান্না করা যাচ্ছে না। রাত সাড়ে ১১টার পর গ্যাস আসে। রাতেই সারাদিনের রান্না শেষ করি।
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়িওয়ালা দুই বছর পর পর ভাড়া বাড়ান। গত বছর বাড়িয়েছিলেন ১ হাজার এবার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেড় হাজার বাড়িয়েছেন। গ্যাস পাবো না, কিন্তু দাম দিবো এটা কেমন কথা!
বাড়িওয়ালাদের দাবি, সরকার নভেম্বরে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। ডিসেম্বর থেকে গ্যাসের বর্ধিত বিল দেওয়া হচ্ছে। তাই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
আজিমপুর শেখ সাহেব এলাকার বাড়ির মালিক নওশাদ বাংলানিউজকে বলেন, গ্যাস না থাকলে আমাদের কিছু করার নেই। গ্যাসের বর্ধিত বিল আমাদের দিতে হচ্ছে। গ্যাসের কারণে ভাড়াটিয়া-বাড়িওয়ালা দুজনেই ভুগছে। ওভেন, রাইস কুকার, ইলেক্ট্রিক চুলা ব্যবহার বেশি হচ্ছে। সবকিছু মিলে ভাড়ায় প্রভাব পড়বে এটা স্বাভাবিক।
মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে মিরপুরে সারাবছরই গ্যাস সংকট রয়েছে। শীতকালে এ তীব্রতা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
পাইকপাড়ার বাসিন্দা দ্যা চিং চিং বলেন, সারাবছর গ্যাসের সংকটে আছি। সকাল ৬টার পর চুলা জ্বলে না। রাত ১১টার পর গ্যাস আসতে শুরু করে। বাসায় মেহমান আসলে বাইরে থেকে খাবার কিনে খাওয়াতে হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে পেট্রোবাংলার দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে সংকট আরও বেড়েছে। এখন দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ২৬৯ কোটি ঘনফুট।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শীতে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে যেখানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ২০০ কোটি ঘনফুট শীতকালে সেখানে ২০ শতাংশ বেশি লাগে।
এছাড়া গ্যাস ঘাটতির সঙ্গে বাড়তি চাহিদা যোগ হওয়ায় গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
এমসি/আরআর